বাংলা-ইংরেজি-হিন্দির উৎস একই আদিম গোষ্ঠী
ইংরেজি থেকে শুরু করে গ্রিক ও বাংলা বা হিন্দির মতো ভাষাগুলো মূলত ইন্দো-ইউরোপীয় ধারা থেকে এসেছে। ভাষাবিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন আগেই এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন। একটি প্রাচীন ভাষাগোষ্ঠীর আধুনিক উত্তরসূরি হিসেবে এসব ভাষার আবির্ভাব হয়েছে। আর ওই প্রাচীন ভাষাটি হাজার হাজার বছর আগের একটি অভিন্ন আদি জনগোষ্ঠীর মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। এখন, নতুন এক গবেষণায় সেই আদি ভাষার বিস্তার এলাকা এবং প্রচলনের সময় সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য মিলেছে।
১৫০টির বেশি ভাষার তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলিতে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকেরা বলছেন, পন্টিক-কাস্পিয়ান সমতলভূমি অঞ্চলে আদি ভাষাটির প্রচলন ছিল সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার বছর আগে। অঞ্চলটির বিস্তার মলদোভা ও ইউক্রেন থেকে শুরু করে রাশিয়া এবং কাজাখস্তানের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত।
এ ব্যাপারে একটি গবেষণা প্রতিবেদন ল্যাঙ্গুয়েজ সাময়িকীতে আগামী মাসে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। শীর্ষস্থানীয় চার গবেষক উইল চ্যাং, চান্ড্রা ক্যাথকার্ট, ডেভিড হল এবং অ্যান্ড্রু গ্যারেট ওই প্রতিবেদনে লিখেছেন, পূর্বপুরুষ-সংক্রান্ত জাতিগত বিশ্লেষণ করে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার আদি উৎস সম্পর্কে তাঁরা যে অনুকল্প (স্টেপ হাইপোথিসিস) গঠন করেছিলেন, তার সপক্ষে সমর্থন মিলেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলো খ্রিষ্টপূর্ব আনুমানিক ৪৫০০ থেকে ৩৫০০ অব্দ পর্যন্ত পশুপালন ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছিল। আরেকটি তত্ত্ব অনুযায়ী, ভাষাগুলো আরও আগে (খ্রিষ্টপূর্ব ৭৫০০ থেকে ৬০০০ অব্দ পর্যন্ত) আধুনিক যুগের তুরস্কের আনাতোলিয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল।
চ্যাং ও তাঁর সহযোগী গবেষকেরা ইন্দো-ইউরোপীয় জীবন্ত ও বিলুপ্ত কয়েকটি ভাষার অন্তত ২০০টি শব্দ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তাঁরা পরিসংখ্যানভিত্তিক একটি মডেলের মাধ্যমে যাচাই করে দেখেন, শব্দগুলো কালের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কত দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে। তাঁরা উপসংহারে পৌঁছান যে এই পরিবর্তনের হার দেখে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যেসব ভাষায় প্রথম ওই শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়, সেগুলো আনুমানিক সাড়ে ছয় হাজার বছর আগে হারিয়ে যেতে শুরু করে।
গবেষকেরা বলছেন, তাঁরা যে পদ্ধতিতে বর্তমান গবেষণাটি সম্পন্ন করেছেন তা ভাষার উৎসবিষয়ক ভবিষ্যৎ গবেষণায়ও কাজে লাগতে পারে। এভাবে আফ্রো-এশিয়াটিক এবং সিনো-তিব্বতীয়র মতো ভাষাগোষ্ঠীর উৎস অনুসন্ধান করার সুযোগ রয়েছে।
সূত্র: সায়েন্স ডেইলি।
নিউজবাংলাদেশ.কম