মোদি-মমতা বৈঠক: বেশিদূর গড়ায়নি তিস্তা
ঢাকা: দিল্লিতে মোদি-মমতা বৈঠকটি হওয়ার আগে অনেক আশায় বুক বেঁধেছিল বাংলাদেশ। ভেবেছিল, এ বৈঠকে তিস্তা নিয়ে চূড়ান্ত মীমাংসার সিদ্ধান্তে আসবেন ভারতের এই দুই নেতা। কিন্তু বিষয়টি দুজনের দরকষাকষিই হলো শুধু। শেষপর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য কার্যকর ফল দিলো না বৈঠকটি। আশার দোলাচলেই আটকে রইলো তিস্তা চুক্তি। স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়েও তেমন আশার খবর নেই। বৈঠকে এ দুটি ইস্যুতে মোদির ‘মান’ রক্ষার প্রশ্নটির পুঁজি করে নিজ রাজ্যের ঋণের সুদ মাফ করাতে ‘লড়াইয়ে’ লিপ্ত হন মমতা। কিন্তু মোদিও অনড়। তিনি সুদ মাফ করবেন না। তাই তিস্তা অথবা স্থল সীমান্ত ইস্যু আর বেশি দূর গড়ালো না।
পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক বর্তমানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
অবশ্য, এদের সহযোগী আরেক প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, দু’দেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত বিল যাতে দ্রুত সংসদে পাশ করানো সম্ভব হয়, সে ব্যাপারে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। তবে, এ তথ্য মমতার পক্ষ থেকে নয়। এটা রাজনৈতিক সূত্রের খবর বলে উল্লেখ করেছে পত্রিকাটি।
গতকাল সোমবার দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বহুল প্রতিক্ষিত বৈঠকটি। বৈঠকটি ভারত-বাংলাদেশ দুদেশের কাছে বেশ কিছুদিন ধরে অঅলোচনার কেন্দ্রে ছিল। তুমুল রাজেনৈতিক বিরোধের কারণে, বিশেষ করে দীর্ঘ নয় মাস পর সাক্ষাৎ হচ্ছে বলে ওই দুই নেতার জন্যও এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি কোনো পক্ষের জন্যই তেমন গুরুত্বপূর্ণ খবর বয়ে আনতে পারেনি।
বৈঠক সম্পর্কে বর্তমান পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, তিস্তা বা সীমান্ত চুক্তি নিয়ে উভয়ের একান্তে কথা হলেও বরফ গললো না। মমতার মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর বিষয়ে জানতে চান মোদি। আগামী মাসেই মোদির বাংলাদেশ সফরের কথা। এর আগেই তিস্তা এবং সীমান্ত চুক্তি নিয়ে মমতার অবস্থান ভালো করে বুঝে নিতে চান চান মোদি।
বিশেষ সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে মমতা বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিস্তা এবং সীমান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কাছে মোদির মান রাখা, না-রাখার বিষয়টা কিছুটা তার হাতে। তাই রাজ্য সরকারের ঋণের ওপর সুদ মাফ করলে বাংলাদেশ নিয়েও তিনি নরম হতে পারেন বলে ইঙ্গিত দেয়ার চেষ্টার করেন। যদিও মমতার চাপের কাছে মাথানত করেননি মোদি। তিনি জানিয়ে দেন, এভাবে ঋণের ওপর সুদ মাফ করা যায় না। মোদি রাজি না হওয়ায় মমতাও বিরোধ বজায় রাখবেন বলে ঠিক করেন।
অবশ্য আনন্দবাজারে প্রতিবেদনে বলা হয়, তিস্তা চুক্তি নিয়ে সহযোগিতার পথেই চলতে চান মমতা। মোদির সঙ্গে তার বৈঠকের পর ওই চুক্তি রূপায়ণের সম্ভাবনা আরও কিছুটা উজ্জ্বল হলো বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত বিল যাতে দ্রুত সংসদে পাশ করানো সম্ভব হয়, সে ব্যাপারে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন মমতা।
এতে আরো বলা হয়, কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে, চলতি বাজেট অধিবেশনেই সংসদের দুই কক্ষে বিলটিকে পাশ করিয়ে নিতে। সেটা সম্ভব হলে এপ্রিলের মধ্যেই বাংলাদেশে যেতে চান মোদী। সূত্রের খবর, ওই সফরে মমতাকেও সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদি তাকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা চুক্তিটি রূপায়ণের প্রশ্নে তৃণমূলের সমর্থন নিঃসন্দেহে কেন্দ্রের বাংলাদেশ-নীতিকে শক্তিশালী করবে।
আনন্দবাজার এ-ও বলেছে, বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ যথেষ্ট গুরুত্ব পেলেও ঠিক কী কথা হয়েছে, সে ব্যাপারে বিশদ কিছু বলতে চাননি মমতা। শুধু জানিয়েছেন যে, তার ঢাকা সফরের বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। তিস্তার জলবণ্টন ও স্থলসীমান্ত চুক্তির মতো বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দিল্লি আসার আগেই যে তিনি এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন, সে কথাও সাংবাদিকদের জানান মমতা।
বাংলাদেশ সফরে শেখ হাসিনাকে দেয়া তিস্তা চুক্তির প্রশ্নে ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং স্থলসীমান্ত চুক্তিটি যাতে দ্রুত রূপায়িত হয়, সে ব্যাপার সক্রিয় ভূমিকা নেয়ার প্রতিশ্রুতি বিষয়ে মমতা তার মনোভাব মোদিকেও জানিয়েছেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ
নিউজবাংলাদেশ.কম