মরমী কবি পাগলা কানাইকে স্মরণ
ঝিনাইদহ: সোমবার মরমী কবি পাগলা কানাই এর ২০৫তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ঝিনাইদহে তার জন্মস্থানে তিনদিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কবির মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, কবি রচিত কবিতা ও গান পরিবেশন। এ উপলক্ষে মাজার প্রাঙ্গণে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। পাগলাকানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদ এসব কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
কর্মসচির প্রথম দিনে আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জেলা সদরের লেবুতলা গ্রামে কবির মাজারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলকার নায়ন। এসময় পাগলাকানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মাজার প্রাঙ্গণে বিকাল থেকে শুরু হচ্ছে তিনদিনব্যাপী মেলা। প্রতিবছরই এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়ে থাকে।
পাগলা কানাই ১৮০৯ সালে তৎকালীন যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার, বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার লেবুতলা গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর জীবন কেটেছে বেড়বাড়ির বোনের বাড়িতে। বাবার নাম কুড়ন শেখ, মায়ের নাম মোমেনা বিবি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে কানাই সবার বড়। ভাইয়ের নাম উজ্জ্বল শেখ, বোন স্বরনারী।
পাঠশালায় পড়াকালে তাঁর বাবা কুড়ন শেখ মারা যান। পিতৃহারা হয়ে কানাই ভবঘুরে হয়ে যান। জীবনের তাগিদে মোমেনা বিবি কোনো উপায়ান্তর না দেখে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চেউনে ভাটপাড়া গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে কিছুদিনের মধ্যে তিনিও মারা যান। মা হারিয়ে কানাই ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বলরামপুরে ভরস মণ্ডলের বাড়িতে রাখালির কাজ নেন। বোন স্বরনারী দুই ভাইকে সেখান থেকে নিজের আশ্রয়ে শ্বশুরবাড়ি বেড়বাড়িতে নিয়ে যান। বোনের শ্বশুরবাড়ির অবস্থা ভালো হওয়য় কানাইয়ের গান চর্চার রাস্তা আরও সহজ হয়। কানাই বোনের বাড়ির গরুর পাল চরাতেন আর গান বাঁধতেন, তাতে সুর দিতেন।
ছোটবেলা থেকেই পাগলাকানাই দুরন্ত প্রকৃতির, পাগলাটে স্বভাবের এবং আধ্যাত্ম প্রেমে উদ্বুদ্ধ ছিলেন। এ খেয়ালীপনার জন্যে শৈশবে স্নেহবশ লোকে তাঁর নামের সাথে ‘পাগলা’ অভিধাটি(উপনাম) যুক্ত করে। তাঁর কর্মকীর্তির সঙ্গে এ পাগলা উপাধিটি অভিন্ন সূত্রে গ্রথিত হয়েছে।
এ পর্যন্ত পাগলা কানাই রচিত গানের মধ্য মাত্র শতিনেক সংগৃহীত হয়েছে। মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন, ড. মাযহারুল ইসলাম, আবু তালিব, আমিন উদ্দিন শাহ, দুর্গাদাস লাহিড়ী, উপেন্দ্রনাথ ভট্রাচার্য প্রমুখ মণীষীরা পাগলা কানাইয়ের গানের সংগ্রহ ও গবেষণা করেছেন।
তৎকালীন সময়ে কবিত্ব প্রতিভায় লালনের পরেই তাঁর স্থান নিরূপণ করা যায়। পুঁথিগত বিদ্যা না থাকলেও আধ্যাত্নিক চেতনায় জ্ঞানান্বিত হয়ে অপরূপ সৃষ্টি সম্ভার নিয়ে গ্রাম বাংলার পথে প্রান্তরে দোতারা হাতে ঘুরে ফিরেছেন তিনি। তাঁর কণ্ঠের একটি গান আজও উচ্চারিত হয় মানুষের মুখে মুখে।
সালাম সালাম সালাম রাখি দেশের পায়।
‘পয়লা সালাম করি আমি খোদার দরগায়
তারপর সালাম করি নবীজীরে
যিনি শোয়া আছেন মদিনায়
ওরে সালাম করি ওস্তাদের আর সালাম পিতা-মাতায়
অধম আমি পাগলা কানাই এল্যাম চাঁদ সভায়
আল্লাহ তরাও হে আমায়।’
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ
নিউজবাংলাদেশ.কম