সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলা
পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের পরিকল্পনা
ঢাকা: সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের প্রস্তাব বিবেচনাধীন, বলে সংসদকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
রোববার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে মহিলা সংসদ সদস্য মনোয়ারা বেগমের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য দেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সহিংসতা ও নাশকতা রোধে পৃথক কোন স্পেশাল ফোর্স গঠনের সম্ভাবনা নেই। তবে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া বিভিন্ন অপরাধ মোকাবেলায় পুলিশ বাহিনীতে আরো ৫০ হাজার জনবল নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।”
ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল ও মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পৃথক দুটি প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “২০১০ সালে কাজ শুরুর পর গত চার বছরেও জাতির পিতার পরিবারের খুনিদের অবস্থান নির্দিষ্ট করতে পারেনি গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি। অনুমানের ওপর নির্ভর করে খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।”
সংসদে দেয়া স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর জবাবে খুনিদের অবস্থান ‘আনুমানিক’ উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে এসএইচএমবি নূর চৌধুরীর অবস্থান কানাডায়, আবু মোহাম্মদ রাশেদ চৌধুরীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, আব্দুল মাজেদ ডাকার (সেনেগাল), মোসলেহ উদ্দিনকে ভারতে, খন্দকার আব্দুর রশিদের অবস্থান কখনো লিবিয়া কখনো পাকিস্তানে এবং শরিফুল হক ডালিমের অবস্থান কখনো পাকিস্তান, লিবিয়া আবার কখনো জিম্বাবুয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে খুনিদের ছবি সম্বলিত তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হলে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরন করে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। এর আগে পলাতকরা যাতে অন্য কোন দেশের (যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা) নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহকে অনুরোধ করা হয়েছে।”
মোহাম্মদ ইলিয়াছের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী সংসদে গত ৫ বছরের ইয়াবা উদ্ধারের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।
পরিসংখ্যানে জানানো হয়, ২০০৯ সাল হতে ২০১৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি ২৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮২ পিস ইয়াবা আটক করা হয়েছে। ওই সময়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ৭ হাজার ১৭৮টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি ১০ হাজার ৭৯ জন। তিনি আরো জানান, মাদক একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও মাদক দ্রব্যের ভায়াল থাবায় আক্রান্ত।
স্বতন্ত্র সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ২০১৪ সালে ১৪ হাজার ৯১৫টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এতে ৭ হাজার ৯৪৮টি মামলায় ৮ হাজার ৩২০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ঢাকা মহানগরীর গুলশান, বনানী, উত্তরা ও বারিধারাহ অন্যান্য অভিজাত এলাকা অবৈধ বার ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৩০টি অভিযানে ৩০টি নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। এতে ৪০ জন আসামী গ্রেফতার হয়েছে।
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের উত্তরে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “দেশের বিভিন্ন কারাগারে এক হাজার ১৩৯ জন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জন নারী আসামি। এ সংখ্যা চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।”
সেলিম উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ১৬৮ জন নারী সদস্য কর্মরত আছেন। এর মধ্যে পুলিশ সুপার একজন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ৬ জন, সিনিয়র এএসপি ২ জন, এএসপি ৪জন, মেডিকেল অফিসার ২জন, ইন্সপেক্টর ৯জন, সাব-ইন্সপেক্টর ১৬ জন, এএসআই ৪১ জন, কনস্টেবল ৮৫জন, বাবুর্চি একজন এবং একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী। এসব নারী সদস্যদের মেয়াদ শেষে তাদের পরিবর্তে রোটেশেন নারী সদস্যদের মিশনে পাঠানোর কার্যক্রম চলছে।
দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে কামাল জানান, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে একহাজার ৩৫৭ জন পুলিশ সদস্য কর্মরত আছেন। এরমধ্যে ১৪০ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তবে মিশনে কোন মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্য নেই।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএ/এমএম
নিউজবাংলাদেশ.কম