News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৩:১০, ৬ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ০৭:০৭, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯

উদীচী ট্র্যাজেডির ১৬ বছর

ঘাতকরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে

ঘাতকরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে

যশোর: উদীচী ট্র্যাজেডির ১৬ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ শুক্রবার। ১৯৯৯ সালের এই দিনে যশোরের টাউন হল মাঠে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে চালানো হয় ভয়াবহ বোমা হামলা। ওই হামলায় প্রাণ হারান ১০ জন। আহত হন শতাধিক। ১৬ বছরেও চাঞ্চল্যকর এই হত্যাযজ্ঞর সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে ঘাতকরা।

১৯৯৯ সালে উদীচী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর পৃথক দু’টি মামলা হয়। প্রথমে কোতোয়ালি পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে সিআইডিতে ন্যস্ত হয়। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। পরবর্তী সময়ে চার্জ গঠনের সময় উচ্চ আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তরিকুল ইসলামকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

চাঞ্চল্যকর এ মামলা আদালতে গড়ানোর ৭ বছর পর ২০০৬ সালের ৩০ মে মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। এরপর এ হামলার সঙ্গে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের জড়িত থাকার বিষয় প্রমাণ পেয়ে পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরপর উদীচী ও সরকার রায়ের বিরুদ্ধে দু’টি আপিল করে।

এই মামলা দুটির দীর্ঘসূত্রিতায় ক্ষতিগ্রস্তরাসহ এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে নাহিদ একজন। তিনি ওইদিন উদীচীর অনুষ্ঠানে উপিস্থিত ছিলেন। ওই বোমা হামলায় স্প্লিন্টারের আঘাতে তিনি দু’টি পা হারান। স্বাভাবিক মানুষের মতো আর কাজ করতে পারেন না তিনি। কিছুদিন একটি চায়ের দোকান চালালেও এখন সেটি ভাড়া দিয়েছেন।

নাহিদ বলেন, দেখতে দেখতে ১৬টি বছর পার হয়ে গেল। কিন্তু ওই দিন কারা এ নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তা আজও জানা সম্ভব হয়নি। এজন্য প্রতিটি মুহূর্তে কষ্ট অনুভব করি। যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না, কেউ বোঝে না।` এ হত্যাযজ্ঞের সুষ্ঠু বিচার দেখতে পেলে খুশি হতেন বলেও জানান তিনি।

ওই ঘটনায় নিহত-আহতদের নানাভাবে পুণর্বাসন করে সরকার। কিন্তু পঙ্গুত্ব বরণ করার পর প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এক লাখ টাকা ছাড়া কিছুই মেলেনি নাহিদের ভাগ্যে। প্রতি ২ বছর পর পর প্লাস্টিকের পা ভেঙ্গে যায়, যা নতুন করে তৈরি করতে ২০ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়।

পঙ্গু হয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিক-কর্মী সুকান্ত দাস বলেন, ১৬ বছর কেন ৩৬ বছর পরে হলেও যেন এ ঘটনার বিচার হয়।

উদীচী যশোরের সভাপতি ডিএম শাহিদুজ্জামান বলেন, গত ১৬ বছর ধরে বিচার চেয়ে আসছি। কিন্তু আজও বিচার পাইনি। নৃশংস এ হত্যাযজ্ঞের বিচার হলে দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন হতো। তাহলে আর রমনা, ছায়ানট, সাতক্ষীরার মেলাসহ বড়-বড় বোমা হামলার ঘটনা ঘটত না।

সরকারি কৌঁসুলি রফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমান সরকার ন্যায় বিচারের স্বার্থে উদীচী মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে উচ্চ আদালতে দু’টি আপিল করে, যা গৃহীত হয়। এরপর আদালতের নির্দেশে খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা যশোর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমপর্ণ করেন। উচ্চ আদালতে মামলা দুটি শুনানি পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই উদীচী মামলার পুনর্বিচারের রায় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি নিয়েছে যশোর উদীচী। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় সংগঠন প্রাঙ্গণে রক্তদান কর্মসূচি, সাড়ে ১০টায় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, বিকেল ৪টায় টাউন হলে আলোচনাসভা, প্রতিবাদী গান ও সন্ধ্যা ৭টায় শহীদ স্মারকে আলোক প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করা হবে।

 

নিউজবাংলাদেশ.কম/এফই

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়