‘পুলিশের রাত-দিন এক হয়ে যাচ্ছে’
নিউজ ডেস্ক : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান হরতাল-অবরোধে রাজধানীসহ দেশজুড়ে চলছে সহিংসতা। সকালে ককটেল তো বিকেলেই পেট্রলবোমা, এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন হিমশিম খাচ্ছে আইন-শৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আবার এ বাহিনীর ব্যস্ততা রয়েছে মন্ত্রী-এমপিদের নিরাপত্তা দিতে। অথচ অভিযানের জন্য পুলিশ মনিটরিং কমিটি চেয়েও পাচ্ছে না। একই কারণে ভেজালবিরোধী অভিযান চালাতে পারছে না বিএসটিআই, ডিসিসি ও রাজউকের মতো মান নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও।
পুলিশ ব্যস্ত বিরোধী দলের অপরাধ দমন এবং মন্ত্রী-এমপিদের নিরাপত্তা দিতে। তাদের এ ব্যস্ততায় ভাটা পড়েছে মামলার তদন্ত কাজেও। এতে সৃষ্টি হচ্ছে মামলার দীর্ঘসূত্রতা, পাশাপাশি বাড়ছে ভুক্তভোগীদের ভোগান্তি।
গত বছর ডিসেম্বরে শাহজাহানপুর রেল কলোনির পরিত্যক্ত পানির পাম্পে পরে মৃত্যু হয় শিশু জিহাদের। এ ঘটনায় জিহাদের বাবা নাছিরউদ্দিন ফকির বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। যেখানে আসামি করা হয় পানির পাম্প বসানোর দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জেএসআর`র মালিক আব্দুস সালাম এবং রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে।
এ মামলার তদন্তে অগ্রগতির ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু জাফর নিউজ বাংলাদেশকে জানান, হরতাল-অবরোধে দেশের যে অবস্থা তাতে কীভাবে ওই মামলা তদন্ত চালাব? প্রতি ঘণ্টায় বাসে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। যা প্রতিহত করতেই পুলিশের রাত-দিন এক হয়ে যাচ্ছে।
জাতীয় পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক দাবি করেছিলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বেশি সতর্ক থাকতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। লোকবলও বাড়াতে হচ্ছে।
তিনি জানান, এক্ষেত্রে পুলিশের দৈনন্দিন কাজে কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটছে। তবে কাজের পাশাপাশি বিনোদনের মাধ্যমে শরীর ও মন থেকে অবসাদ দূর করতে হবে।
ঢাকা ও এর বাইরে একাধিক থানার পুলিশ সুপার দাবি করেছেন, চোরাগোপ্তা হামলা ঠেকানোই এখন তাদের মূল লক্ষ্য। এ ধরনের সম্ভাব্য স্থান, জনবহুল মোড়, রাস্তা কিংবা স্পর্শকাতর স্থান, অফিস-আদালত, দূতাবাস, অভিজাত এলাকা, ভিআইপিদের বাসাবাড়িতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে পুলিশ প্রশাসনের গলদঘর্ম এ অবস্থায় ভাটা পড়েছে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা, ভেজাল বিরোধী ও দখলদার উচ্ছেদ অভিযান।
এ অবস্থায় পুলিশের কর্মঘণ্টা বিষয়ে বনানী থানার এসআই মো. শামীম আশরাফ নিউজ বাংলাদেশকে জানান, চলতি বছরের শুরু থেকেই প্রতিদিন প্রায় ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। কখনো কখনো ২০ ঘণ্টাও দায়িত্বে থাকা লাগে।
৬ জানুয়ারি থেকে ২০ দলীয় জোট টানা হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি চলছে সহিংসতা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এত দীর্ঘ সময় ধরে অচলাবস্থা দেশের ইতিহাসে এই প্রথম। সহিংসতাকারীদের প্রধান টার্গেট যানবাহন।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, আনসার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা দায়িত্ব পালন করেও নাশকতা থামাতে পারছে না।
বাণিজ্য মন্ত্রাণালয় সূত্র জানায়, চলমান হরতাল-অবরোধে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার স্বার্থে ৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশ চেয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু মনিটরিং টিমের চাহিদা অনুযায়ি পুলিশ দিতে না পারায় সে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে রয়েছে।
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী হরতাল-অবরোধের দোহাই দিয়ে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। প্রয়োজনীয় পুলিশ ফোর্স না পাওয়ায় অচল অবস্থা বিরাজ করছে রাজউক, সিটি কর্পোরেশন ও বিএসটিআই’র অভিযানে।
বাংলাদেশ স্ট্যন্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনষ্টিটিউশন (বিএসটিআই), যার মূল দায়িত্ব দেশের উৎপাদিত শিল্পপণ্য, বৈদ্যুতিক ও প্রকৌশল পণ্য, খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্যের মান প্রণয়ন, ওজন ও পরিমাপের সঠিকতা তদারকি ও নিশ্চিতকরণ। কিন্তু মান নিয়ন্ত্রণকারী এ প্রতিষ্ঠানটির নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, সংকট রয়েছে লোকবলেও।
তবে বড় সমস্যা হচ্ছে, এ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো ম্যাজিস্ট্রেট নেই। আর ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া মাঠ পর্যায়ে অভিযান চালাতে পারে না বিএসটিআই। তাই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য এ প্রতিষ্ঠানকে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে ধর্ণা দিতে হয় জেলা প্রশাসকের টেবিলে।
অবশ্য সংকট নিরসনে প্রতিষ্ঠানটিতে ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে ব্যাপক সফলতা অর্জনকারী ম্যাজিস্ট্রেট রোকন-উদ-দৌলাসহ অন্তত তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়ার দাবিও জানানো হয়েছে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি সঠিক সময়ে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে গত বছরেই ৪৭ জন মাঠ কর্মকর্তা নিয়োগের ছাড়পত্র চেয়ে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। যার প্রেক্ষিতে বিএসটিআই জনবল নিয়োগসংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে।
কিন্তু দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেছে। থেমে গেছে বিএসটিআইএর ভেজালবিরোধী তৎপরতাও। বিএসটিআই পরিচালক কমলপ্রসাদ দাস গণমাধ্যমকে জানান, জেলা প্রশাসক চাইলেই কেবল তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকেন। তবে তাদের কার্যক্রম শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালতেই সীমাবদ্ধ নয়।
নিউজ বাংলাদেশ.কম/এটিএস
নিউজবাংলাদেশ.কম