যুদ্ধাপরাধ: এবার রায় সুবহানের
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় জানা যাবে বুধবার।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের নয়টি অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ সোমবার রায় ঘোষণার জন্য ১৮ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করে দেয়।
আট ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধে নয়টি ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই জামায়াত নেতার বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল।
সাক্ষ্য-জেরা ও দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে গতবছর ৪ ডিসেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।
পাবনা সদরের সাবেক সংসদ সদস্য সুবহানের জন্ম ১৯৩৬ সালে সুজানগর থানার মানিকহাটি ইউনিয়নের তৈলকুণ্ডি গ্রামে।
পাকিস্তান আমলে তিনি ছিলেন পাবনা জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর তিনি পাবনা জেলা শান্তি কমিটির সেক্রেটারি এবং পরে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হন।
তার নেতৃত্বে পাবনা জেলার বিভিন্ন থানায় শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও মুজাহিদ বাহিনী গঠিত হয় বলে প্রসিকিউশনের অভিযোগ।
শুনানির সমাপনী বক্তব্যে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে দাবি করে সুবহানের সর্বোচ্চ শাস্তির আর্জি জানান।
অন্যদিকে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি দাবি করে সুবহানের খালাস চান তার আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী।
সুবহানের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হলে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে সুবহান পাবনায় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের নামের তালিকা করে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের কাছে সরবরাহ করতেন বলেও শুনানিতে ট্রাইব্যুনালকে জানানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে ইয়াহিয়া সরকারের পতন দেখে জামায়াতগুরু গোলাম আযমের সঙ্গে সুবহানও পাকিস্তানে চলে যান। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি দেশে ফেরেন এবং পরে সংসদ সদস্য হন।
২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল প্লাজা থেকে সুবহানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর ২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জামায়াতের এই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় প্রসিকিউশনের তদন্ত দল। ১৯ অক্টোবর আদালত তা আমলে নেয় এবং ৩১ ডিসেম্বর হয় অভিযোগ গঠন।
গতবছর ২৭ মার্চ মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়। ১ এপ্রিল প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমনের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মামলার শুনানি।
প্রসিকিউশনের পক্ষে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও মো. নূর হোসাইনসহ ৩১ জন। অন্যদিকে সুবহানের পক্ষে তিনজনের নাম দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তার আইনজীবীরা কোনো সাফাই সাক্ষী হাজির করতে পারেননি।
ডিএনটিডি/
নিউজবাংলাদেশ.কম