প্রসঙ্গ ফারাবী: কে সঠিক, চাচা মিজান না চাচী রিনা!
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মৌলভীবাজার: বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার প্রধান আসামি শফিউর রহমান ফারাবী তার স্বজন-পরিজনসহ এলাকার লোকজনের কাছে বেশ মেধাবী ছাত্র হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় ফারাবী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হয় সবার মাঝে। এরপর অভিজিৎ হত্যা মামলায়ও প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার হওয়ার পর ফারাবীর বিষয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে তার পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কালাইশ্রীপাড়াসহ আশপাশের এলাকায়। তবে মুখ ফুটে কেউ কিছু বলতে চাচ্ছে না।
গত সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের কালাইশ্রীপাড়ায় ফারাবীর পৈতৃক নিবাস ‘রহমান ভিলাতে’ গিয়ে জানা যায়, তার পরিবার সেখানে নেই। বাবার চাকরিসূত্রে দীর্ঘকাল তারা সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারে বসবাস করেছেন। তবে কালাইশ্রীপাড়ার বাড়িতে এখন বসবাস করছেন ফারাবীর চাচা মিজানুর রহমান। তিনি বাড়িতে ছিলেন না। কথা হয় চাচী রিনা আক্তারের সঙ্গে।
রিনা জানান, দাদার বাড়ি হলেও ফারাবী কখনোই এখানে নিয়মিত আসা যাওয়া করেনি। আগে মাঝে-মধ্যে এলেও সে কারো সঙ্গে কোনও কথা বলত না, প্রায় সময়ে একাই ঘরে বসে থাকত।
ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় ফারাবীর সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের পরিবারের ছেলে এমন করতেই পারে না। র্যাবের ভয়ে সে অভিজিতকে হত্যার হুমকির বিষয়টি স্বীকার করেছে। আমরা জানি ফারাবী শুধু ইসলাম সম্পর্কে লিখছে। সে কোনোভাবেই জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত থাকতে পারে না।”
তবে ফারাবীর চাচা মিজানুর রহমানের সঙ্গে সেলফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায় ভিন্ন তথ্য। তিনি বলেন, “ফারাবী নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছিলাম। তাকে এ পথ থেকে সরে আসার কথা বললে সে (ফারাবী) শুধুই হাসতো আর বলতো, চাচা আপনি যে কি বলেন!”
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফারাবীর বাবা ফেরদৌস রহমান বিআরডিবির উপপরিচালক ছিলেন, চাকরিসূত্রে তিনি পরিবার নিয়ে মৌলভীবাজারে থাকতেন। তিনি অবশ্য এখন বেঁচে নেই। তবে চাচা মিজানুর রহমানের পরিবারের সঙ্গে ফারাবীদের যোগাযোগ খুব একটা ছিল না।
তবে মৌলভীবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেরদৌস রহমান দুটি বিয়ে করেছিলেন। প্রায় ১৫ বছর আগে ফারাবী তার বাবা ও সৎমায়ের সঙ্গে সেখানে বসবাস করতেন। শহরে জেলা প্রশাসকের বাংলোর কাছাকাছি সলিমাবাদ এলাকায় তাদের সরকারি বাসা ছিল। এখন আর তাদের পরিবার সেখানে থাকে না।
জানা গেছে, ফারাবীর জন্মের দুই বছরের মাথায় তার মা সেলিশ বেগম মারা যান। এছাড়া তার সৎমা মণিও বর্তমানে বেঁচে নেই।
অপরদিকে, কালাইশ্রীপাড়ায় ফারাবীদের পৈতৃক বাড়ির প্রতিবেশিদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ফারাবী খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। সে মানুষের সঙ্গে শুধু ইসলাম ধর্ম নিয়েই কথা বলত। সে কাউকে হত্যা করতে পারে এটা কিছুতেই বিশ্বাস হয় না।
তবে পর পর দুটি নৃশংস হত্যার ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার খবর স্বজন ও এলাকাবাসীকে বিস্মিত করেছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ফরাবী প্রসঙ্গে কার মূল্যায়ন সঠিক-- তার চাচা মিজানুর রহমান না চাচী রিনা আক্তারের? এ প্রশ্ন এখন সবার।
নিউজবাংলাদেশ.কম/একে
নিউজবাংলাদেশ.কম