ঘুষে কমে হোল্ডিং ট্যাক্স!
নিউজবাংলৈাদেশ রিপোর্ট
১২ বছর আগে বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে রাজধানীর আর কে মিশন রোডে বাড়ি করেন সুফিয়া খাতুন। অনেক কষ্টে বাড়িটি তিন তলা পর্যন্ত করেন তিনি। কিন্তু সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কর্মকর্তার ‘আবদার’ না মেটানোয় বাড়ির মালিক সুফিয়ার এখন রাতের ঘুম হারাম প্রায়। তাই এখন তাকে মাস মাস গুনতে হচ্ছে হোল্ডিং ট্যাক্স নামক বাড়তি ট্যাক্স।
সুফিয়ার অভিযোগ, তার বাড়ি তিন তলা হলেও বর্ষা এলে নিচ তলায় পানি উঠে যায়। ফলে ভাড়াটিয়া থাকে না। দ্বিতীয় তালায় অন্ধকার। সেখানেও নিয়মিত ভাড়াটিয়া থাকে না। এর পরেও তাকে গুনতে হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত হোল্ডিং ট্যাক্স। অথচ তার পাশের একটি বাড়ি তার বাড়ি থেকে অনেক উন্নত হলেও ওই মালিকের হোল্ডিং ট্যাক্স তার চেয়ে কম। তিনি বিষয়টি জানিয়ে সিটি কর্পোরেশনে ট্যাক্স কমানোর আবেদন করলেও কোনও সমাধান পাননি।
শুধু সুফিয়া খাতুন নন। তার মতো এমন হাজারো বাসিন্দা রয়েছে যারা হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানে নিয়মিত হয়রানি ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি বাড়ি হলেও হোল্ডিং ট্যাক্সে চরম বৈষম্য চলছে। এর ফলে প্রতিনিয়ত বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে দুই সিটিবাসীকে। পড়তে হচ্ছে বাড়তি বিড়ম্বনায়ও। হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিমাণ বেশি হলে ঘুষের বিনিময়ে ট্যাক্স কমানোর অভিযোগ রয়েছে অনেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। ফলে ট্যাক্স প্রদানে দুই সিটি করপোরেশনবাসীকে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
তবে ঢাকা দক্ষিণের চেয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনে নৈরাজ্যের মাত্রা বেশি বলে অভিযোগে জানা গেছে।
অবশ্য সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, একবার হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়ে গেলে তা তাদের কমানোর কোনো সুযোগ থাকে না। সে ক্ষেত্রে গ্রাহককে আদালতে যেতে হয়।
জানা গেছে, বাড়ি ভাড়ার ওপর ৭ শতাংশ, বাতি কর ৩ শতাংশ এবং পরিচ্ছন্নতার ওপর ২ শতাংশ মিলে মোট ১২ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স আরোপ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী কোন করদাতা ‘পি-ফর্ম’ পূরুন করে রাজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আবেদন করতে পারে। আপিল বোর্ডের ক্ষমতা অনুযায়ী করদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কর রেয়াত দেওয়া হয়। এই ১৫ শতাংশ কর রেয়াতের সুযোগে অনেক করকর্মতা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, রাজস্ব কর্মকর্তারা সরাসরি এই কর রেয়াত সুযোগ কাউকে দেয়না। এই কর রেয়াত পেতে যোগাযোগ করতে হয় দালালদের সাথে। একমাত্র দালালদের মাধ্যমে আবেদন করলেই কেবল কর রেয়াত পাওয়া যায়।
তবে এখানেও রয়েছে স্তরভেদে রেয়াত পাওয়ার সুযোগ। টাকার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে কত শতাংশ কর রেয়াত পাওয়া যাবে। স্তর অনুযায়ী ৭ হাজার থেকে শুরু করে যার কাছে যত বেশি পাওয়া যায় তার তত বেশি শতাংশ কর রেয়াত মেলে। তবে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করে দালালরা। তবে লোক বুঝে দাবির অংক নির্ধারণ হয়। বেশি টাকা পেলে বেশি কর রেয়াতের সুযোগ থাকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে কর কর্মকর্তা (গুলশান অঞ্চল-৩) মনিরুজ্জামান মৃধা বলেন, ‘কর কামানোর ক্ষেত্রে আমাদের কোনও ক্ষমতা নেই। আগে বকেয়া কর পরিশোধ করতে হবে। তারপর আপিল বিভাগ বরাবর দরখাস্ত করলেই কেবল কর কমানো সম্ভব। তবে আমাদের মাধ্যমেই দরখাস্ত করতে হয়।’
এক্ষেত্রে দালালদের তৎপরতার কথা অস্বীকার করেন তিনি। তবে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে কোনও দালাল বা সিটি করপোরেশনের কেউ জড়িত থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই কর কর্মকর্তা।
তিনি আরো বলেন, ‘অন্য বাড়ির তুলনায় কারো বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বেশি হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
একে/
নিউজবাংলাদেশ.কম