প্রেমের কারণে কলেজ ছাত্র খুন!
বরিশাল: বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ি গ্রামে শুখদেব মিস্ত্রী(২৩) নামে এক কলেজ ছাত্র হত্যাকে কেন্দ্র করে একই গ্রামের দশরথ সমদ্দারের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
মঙ্গলবার সকালে বিক্ষুব্ধরা প্রেমিকার বাড়ির বসতঘরসহ চারটি ঘর ভস্মিভূত করে জনতা। দশরথ সমদ্দারের কলেজ পড়ুয়া কন্যা মিতুর সাথে প্রেমের সম্পর্কের কারণে ওই বাড়িতেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০ থেকে ২৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছে। জনরোষ থেকে রক্ষায় অভিযুক্ত ছয় জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা এবং অগ্নিসংযোগ,বাড়ি ঘরে হামলার অভিযোগ এনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
উজিরপুর থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম পিপিএম জানান, জামবাড়ি গ্রামের সুপেন মিস্ত্রীর ছেলে ঢাকার তিতুমীর কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র শুখদেব মিস্ত্রীর লাশ মঙ্গলবার সকালে দশরথ সমদ্দারের বাড়ির পেছনের পুকুরের পাশের বাঁশঝাড়ের মধ্য থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই গ্রামের বাসিন্দা বেলাল কলেজ ছাত্র শুখদেবের লাশ দেখে চিৎকার দিলে গ্রামবাসী জড়ো হতে থাকে।
ওসি জানান, প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে দশরথের পরিবার শুখদেবকে হত্যা করেছে এমন ধারণায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী সকাল নটায় দশরথ সমদ্দারের বসতঘরে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। উত্তেজিত গ্রামবাসীকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হারতা ক্যাম্প পুলিশ ব্যর্থ হলে উজিরপর থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ব্যাপক লাঠিচার্জ ও ২০ থেকে ২৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করেছে। আশপাশের বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নেয়া দশরথ সমদ্দার, তার স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়েকে পুলিশ আটক করেছে। দশরথের বড় ছেলে পলাতক রয়েছে।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, হামলার আশঙ্কায় দশরথের তিন মেয়ে কনক, নমিতা ও মিতু দা, খোন্তা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুতি নেয়। এক মেয়ে গ্রামবাসীকে লক্ষ করে একটি খোন্তা ছুঁড়ে মারে। এক পর্যায় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী দশরথ সমদ্দারের বাড়ির বসতঘরসহ ছোট/বড় চারটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দিলে তা সম্পুর্ণ ভস্মিভূত হয়।
হারতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হরেণ রায় বলেন, দশরথ সমদ্দারের ছোট মেয়ে মিতু সমদ্দারের সঙ্গে প্রতিবেশী শুকদেব মিস্ত্রির দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিলো। কয়েক মাস আগে সুখদেব ঢাকার গুলশান শাখা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে চাকুরি নেয়। চাচাতো বোন অপর্ণার বিয়েতে অংশ নিতে সোমবার সকালে সে গ্রামে আসে। ওইদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রেমিকা মিতুকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় সে। বিকেলে বাড়ি ফিরে সন্ধ্যার পর আবার বাড়ির বাইরে বের হয় সুখদেব।
সকালে শুখদেবের লাশ দেখতে পেয়ে ক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী ওই বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। চেয়ারম্যান হরেণ রায় বলেন, তিন মেয়ের উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরার জন্য দশরথ সমদ্দারের পরিবারকে এলাকায় কেউ ভাল চোখে দেখত না। স্থানীয়দের ধারণা দশরথ সমদ্দারের ছেলে ও তার বড় মেয়ে চক্রান্ত করে শুখদেব মিস্ত্রীকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে।
বরিশাল জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার জানান, শুখদেবের গলায় ফাঁস এবং শরীরে মারধরের চিহ্ন রয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য তার লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় দশরথ সমদ্দারসহ তার পরিবারে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া একটি হত্যা মামলা এবং বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলার অভিযোগ এনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।
এদিকে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ
নিউজবাংলাদেশ.কম