পরিবহন সেক্টর
যশোরে অবরোধ-সহিংসতায় ক্ষতি ৬০০ কোটি
যশোর: ৫ জানুয়ারি থেকে ২৪ মার্চ টানা প্রায় তিন মাস হরতাল-অবরোধে (দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা) যশোর পরিবহন সেক্টরে বাস মালিক, ট্রাক মালিক ও শ্রমিকদের প্রায় ছয়শ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন যশোরের পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার নিউজবাংলাদেশ.কম প্রতিনিধির কাছে তারা জানিয়েছেন, দেশের বর্তমান অবস্থায় যশোরের পরিবহন শ্রমিকরা চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে।
যশোর পরিবহন সংস্থা শ্রমিক সমিতির সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু জানান, “যশোরে নটি শ্রমিক ইউনিয়ন আছে। এ ইউনিয়নগুলিতে প্রায় ৩০/৩৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে। এখান থেকে তারা যা আয় করে, তা দিয়ে তাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়। চালক ছাড়াও প্রতিটি গাড়িতে দু/তিন জন শ্রমিক কাজ করে। প্রতি ট্রিপে একজন চালক আয় করে পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা।একটি গাড়ি প্রতিদিন অন্তত দুটি ট্রিপ দিতে পারে। আর শ্রমিকরা পায় তিনশ থেকে চারশ টাকা। এ টাকা দিয়েই তারা স্ত্রী সন্তানদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করে। তারা কাজ করে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ ভিত্তিতে।”
সমিতির হিসাব অনুযায়ী, “একজন শ্রমিকের একদিনে দুট্রিপে মাথাপিছু আয় এক হাজার টাকা হলে ৩০ হাজার শ্রমিকের আয় তিন কোটি টাকা। তিন মাসের অবরোধে শ্রমিকদের ক্ষতি হবে প্রায় তিনশ কোটি টাকা। ফলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তারা এক প্রকার মানবেতর জীবন যাপন করছে।”
যশোর মিনি বাস ও বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রমেন্দ্র নাথ মণ্ডল জানান, তার সমিতিসহ যশোরে মোট নটি বাস মালিক সমিতি রয়েছে। দূরপাল্লা ছাড়াও যশোর থেকে দেশের দক্ষিণ পশ্চিাঞ্চলের ১৮ রুটে প্রায় ১৫ শ থেকে ২ হাজার বাস চলাচল করে। আন্তঃজেলা বাস থেকে প্রতি ট্রিপে খরচা বাদে মালিকরা পায় দেড় থেকে দুহাজার টাকা। দূরপাল্লার বাস থেকে পায় তিন থেকে চার হাজার টাকা। এ হিসাবে তিন মাসের হরতাল অবরোধে বাস মালিকদের প্রায় ১২০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।”
.
এছাড়া অবরোধে বাস চালাতে গিয়ে অনেক স্থানে অবরোধকারীরা বাস ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দিয়ে ক্ষতি সাধন করে।
যশোর ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিন্টু চাকলাদার বলেন, “তার সমিতির অধীনে ১৫/১৬শ মালিকের প্রায় ৫ হাজার ট্রাক আছে। ট্রিপ প্রতি একটি ট্রাক থেকে প্রতিদিন একজন মালিক খরচা বাদে পায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। এ হিসাবে ৩ মাসে হরতাল-অবরোধে ট্রাক চলাচল করতে না পারায় মালিকদের আথির্ক ক্ষতি প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।”
যশোর জেলা মটর ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ট্রাক শ্রমিক সংগঠন) কোষাধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মনু জানান, “তার সমিতিতে প্রায় সাত হাজার শ্রমিক আছে। এদের প্রত্যেকের দৈনিক আয় ছয়শ থেকে পনেরশ টাকা। তিন মাসের হরতাল-অবরোধে তাদের কেউ কাজ করতে পারেনি। ফলে হিসাব অনুযায়ী, শ্রমিকদের আর্থিক ক্ষতি হবে প্রায় ৩০ কোটি টাকার উর্ধ্বে। এ ছাড়াও হরতালের কারণে আয় করতে না পেরে অনেক শ্রমিককে পরিবার নিয়ে উপোস থাকতে হচ্ছে।”
নিউজবাংলাদেশ/কেজেএইচ
নিউজবাংলাদেশ.কম