ব্যবসা নয়, মাদক সেবন দেখে ফেলায় খুন হন সুমি
ঢাকা: মাদক ব্যবসা নয়, সেবন করতে দেখে ফেলাতেই আট টুকরো লাশ হতে হয়েছে সুমিকে। ঘটনার পরপর পুলিশ মাদক ব্যবসার বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ডের কথা জানালেও আসামীদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে অন্য এক রোমহর্ষক চিত্র।
আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আসামী মো. সাইদুল ইসলাম (২৭) জানান, ঘটনার ৪/৫ দিন আগে সুমির স্বামী নাসির ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে ধরা পরে এবং মোবাইল কোর্টে তার এক বছরের সাজা হয়। এই ঘটনায় আমাকেসহ (সাইদুল) সুজন, হানিফ ও মন্টিকে দায়ী করে সুমি।
সাইদুল জানায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ইয়াবা সেবনের জন্য মন্টিদের বাসার ছাদে অবস্থান করার সময় বাসার নীচে সুমিকে দেখতে পায় তারা। এসময় উপস্থিত ছিল সুজন, রাতুল, শাওন, মিকি মাউস ওরফে আলম, তোতলা সুমন, বাংলা সোহেল, হানিফ ও মন্টি। সুমি তাদেরকে ধরিয়ে দিতে পুলিশ নিয়ে আসছে বলে তাদের সন্দেহ হয়। এক পর্যায়ে নীচে নেমে সুজন, হানিফ, শাওন, সাইদুল নিচে নেমে সুমিকে ধরে মন্টির বাসার ৬ষ্ঠ তলার ছাদের চিলেকোঠায় নিয়ে আসা হয়। তারা সুমিকে লোহার এঙ্গেলের সাথে নাইলনের রশি দিয়ে বেঁধে রাখে। এসময় শিমুকে মন্টি জোর পূর্বক ইয়াবাও সেবন করায়। সুজন কাগজ মুড়িয়ে, স্কসটেপ পেঁচিয়ে বল বানিয়ে সুমির মুখের ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে।
রাত সাড়ে ৩টার দিকে সুমির গলায় ছুরি প্রথম ছুরি চালায় সাইদুল ইসলাম ও সুজন। মন্টি বাসা থেকে চাপাতি ও রেতের মতো একটি ছুরি নিয়ে আসে। মন্টি চাপাতি দিয়ে সুমির মাথাকে দেহ থেকে আলাদা করে। সুজন সুমির ডান পা কাটে। রাতুল বাম পা কাটে। সাইদুল ও বাংলা সোহেল ডান হাত কাটে। হানিফ বাম হাত কাটে। মিকি মাউস ওরফে আলম ছুরি দিয়ে সুমির পেটে আঘাত করে।
বাংলা সোহেল ডান ও বাম হাত দুইটি ওয়াসার খালি জায়গায় ফেলে দেয়। সুজন ডান পা ও বাম পা হোটেল উপবন ও মন্টির বাসার চিপায় ফেলে দেয়। মন্টি ঘর থেকে কেরোসিন তেল এনে সুমির কাটা মাথা ভিজিয়ে আগুন দিয়ে পোড়ায় যাতে চিনতে পারা না যায়। পরে সাইদুল, শাওন, তোতলা সুমন, বাংলা সোহেল, রাতুল, হানিফ মন্টি, আলম, সুজন সবাই মিলে চাদর দিয়ে মৃতদেহ পেঁচিয়ে ৬ষ্ঠ তলার ছাদ থেকে নীচে নামিয়ে এনে ওয়াসার টিনশেড ঘরের টিনের উপর ফেলে দেয়।
মন্টির ঘর থেকে বালতি ও মগ নিয়ে এসে তোতলা সুমন, আলম পানি দিয়ে রক্ত পরিস্কার করে। এসব করতে করতে তখন ফজরের আজান দিয়ে দেয়। মন্টিকে বাসা থেকে কয়েকদিন বাইরে থাকতে বলে এবং অন্য সবাইকে গা ঢাকা দিতে বলে সাইদুল ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
এদিকে, এই হত্যা মামলার আইও মতিঝিল থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন মাদক ব্যবসার জের ধরেই খুন হয়েছেন সুমি। পরে সুমির ভাই ঢাকায় এসব কথা শুনে লাশ গ্রামে না নিয়ে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে দিয়ে যায় দাফন করার জন্য।
উল্লেখ্য, গত ১০মার্চ রাত দেড়টায় মতিঝিল কালভাট রোডস্থ হোটেল উপবনের উত্তর পাশ থেকে মানুষের ১টি হাত ও ১টি পায়ের কাটা অংশ উদ্ধার করা হয়। এর পর পুলিশ খোঁজাখুজির একপর্যায়ে পার্শ্ববর্তী ওয়াসা ভবনের পাশে একটি পা এবং একই ওয়াল সংলগ্ন ময়লা আবর্জনার উপর ১ টি হাত ও শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন ১টি বাহু উদ্ধার করে। এছাড়া হাফ বিল্ডিংস ওয়াসা স্টোর রুমের টিনের চালে একটি রক্ত মাখা সাদা বিছানার চাদর ও নীল রঙের নাইলোনের রশি দিয়ে পেচানো ও বাঁধা অজ্ঞাত পরিচয়ের হাত-পা বিহীন দেহ উদ্ধার করে। এরপর আবার ১৯৩/১ ফকিরাপুল আহসান মঞ্জিল এর ৭ম তলার সিড়ির মাঝখানে আগুনে ঝলসানো ও ছাইকালী মাখা অবস্থায় মানুষ্য মস্তক সদৃশ বস্তু উদ্ধার করে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনএইচ/এসজে
নিউজবাংলাদেশ.কম