পানি ঘাটতি মোকাবেলায় নাটকীয় পরিবর্তন প্রয়োজন
ঢাকা: ২২ মার্চ রোববার বিশ্ব পানি দিবস। দিবসটি সামনে রেখে শুক্রবার জাতিসংঘ বিশেষ সতর্কবার্তা দিয়ে পানি নিয়ে একটি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, পানির অপব্যবহার বন্ধ না হলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে বিশ্বে ৪০ শতাংশ পানি ঘাটতি দেখা দেবে।
জাতিসংঘের ‘বিশ্ব পানি উন্নয়ন’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির মজুদ কমে যাচ্ছে। এদিকে বিশ্বের জনসংখ্যাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা নয়শ কোটি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে কৃষি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত কাজের জন্য আরো বেশি পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানির প্রয়োজন পড়বে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে পানির চাহিদা বাড়বে ৫৫ শতাংশ। কিন্তু পানির মজুদ কমে যাচ্ছে। জরুরিভিত্তিতে পানি ব্যবহারে নাটকীয় পরিবর্তন না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব তার চাহিদার মাত্র ৬০ শতাংশ পানি পাবে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না হলে বিশ্বে মারাত্মক পানির সঙ্কট দেখা দেবে। পানির সদ্ব্যবহারই ভবিষ্যতে এই ঘাটতি থেকে রক্ষা করতে পারে।
এদিকে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, প্রতিবেদনে নীতিনির্ধারকসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি পানি নীতিমালা পুনরায় বিবেচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি সিঙ্গাপুরের মতো বর্জ্য মিশ্রিত পানি পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার প্রক্রিয়া স্থাপনের জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশ্ব পানি দিবস
২২ মার্চ রোববার বিশ্ব পানি দিবস। এ বছর বিশ্বব্যাপী পানির অপরিহার্যতা বিবেচনা করে পানি দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ণয় করা হয়েছে, ‘পানি ও টেকসই উন্নয়ন’। অর্থাৎ টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রয়োজন পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা।
সারাবিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিনটি পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পরিবেশবাদী সংগঠনসমূহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ উপলক্ষে রোববার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিল (বার্ক) ভবনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
এছাড়া বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (বাউইন) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দিবসটি উপলক্ষে মানববন্ধনের আয়োজন করেছে। মানববন্ধনটি সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মূল ফটকের সামনে অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনের (ইউএনসিইডি) এজেন্ডা ২১-এ প্রথম বিশ্ব পানি দিবস পালনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভা ২২ মার্চকে বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯৩ সালে প্রথম বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয়। তারপর থেকে এই দিবস পালনের গুরুত্ব বাড়ছে। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো এই দিনটিকে নিজ নিজ রাষ্ট্রসীমার মধ্যে জাতিসংঘের পানিসম্পদ সংক্রান্ত সুপারিশ ও উন্নয়ন প্রস্তাবনাগুলোর প্রতি মনোনিবেশের দিন হিসেবে উৎসর্গ করেছে। প্রতি বছর বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা বিশেষ কর্মসূচি পালন করে থাকে। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতিসংঘ- বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য, বার্তা ও প্রধান সংস্থা নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছে। সদস্য দেশগুলোর বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও পরিচ্ছন্ন পানি ও পানিসম্পদ রক্ষা সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এই দিনে বিশেষ কর্মসূচি আয়োজন করে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ
নিউজবাংলাদেশ.কম