পানি সম্পদ সংরক্ষণে উদাসীন রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো
ঢাকা: পানি সম্পদ সংরক্ষণে ২০টির বেশি আইন থাকলেও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো পানি সম্পদ সংরক্ষণে উদাসীন বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশবাদি বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
শনিবার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) কার্যালয়ে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষ্যে ‘পানি সম্পদ সংরক্ষণ ও পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, সরকারি সংস্থাগুলো দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের চেয়ে পানি উত্তোলন ও ব্যবহারেই অধিক মনোযোগী। ফলে পানি সম্পদ আজ হুমকির সম্মুখীন। অবিলম্বে পানি সম্পদের উৎসগুলো সংরক্ষণ ও পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন।
মূল প্রবন্ধে ড. মশিউর রহমান বলেন, "রাজশাহী ও রংপুর এবং খুলনা বিভাগে কৃষি কাজের জন্য গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভ থেকে অতি মাত্রায় পানি উত্তেলন করা হচ্ছে। সেখানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাওয়ার কারণে শুকনো মৌসুমে নদীর প্রবাহ দ্রুত শুকিয়ে যায়। পুকুর, জলাশয় এবং হস্তচালিত নলকূপ থেকে সাধারণ মানুষ তার প্রয়োজনীয় পানি তখন আর সংগ্রহ করতে পারে না। সেখানকার মানুষের জীবন যাপনে সৃষ্ট এই সঙ্কট নিরসনকল্পে রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও এর কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা না হলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি অধরাই থেকে যাবে।"
প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান তার বক্তব্যে বলেন, "বিশ্বে যে ১৫টি দেশ সবচেয়ে বেশী ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে তাদের মধ্যে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান এবং ইরান এর পরই বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশে ২০১০ সালে ৩০.২১কিউবিক কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে, এর মধ্যে ৮৬ ভাগ সেচ কাজে, ১৩ ভাগ গৃহস্থালী এবং ১ ভাগ শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
তিনি বলেন, "বিএডিসির তথ্যানুযায়ী ২০০৪ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে অগভীর নলকূপের সাহায্যে সেচের পরিমাণ ১৪,৪৪১ বর্গ কিলোমিটার থেকে কমে ১৩,৬৯১ বর্গ কিলোমিটারে দাড়িয়েছে। মার্চ এবং এপ্রিল মাসে ১৬ লাখ অগভীর নলকূপের মধ্যে ৪ লাখ অকেজো হয়ে পড়ে।দেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে বিগত ৩০ বছর (১৯৮১-২০১০) ধরে বার্ষিক গড় ১.৪% হারে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সবচেয়ে বেশী নেমেছে রাজশাহীতে। প্রতি ইউনিট এলাকায় নলকূপের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে প্রতিটি নলকূপের আওতাধীন এলাকা ১৯৮৪-৮৫ হতে ২০১০-১১ অত্যন্ত কমে ১৪.৫ থেকে ২.৮ হেক্টরে দাড়িয়েছে। গড়ে নদীর পানির স্তর ১৯৮১ হতে ২০১০ এর মধ্যে ২০ মিটার থেকে কমে ১৯ মিটারে দাড়িয়েছে। ১৯৮৯ - ২০১০ সালের মধ্যে শুষ্ক মৌসুমের মোট জলাভূমির প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ হারিয়ে গেছে।"
নীতি বিশ্লেষক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, "সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা পানি ব্যবহার ও দুষণ করছে। কিন্তু পানি সম্পদ সংরক্ষণ বা পানি রিচার্জ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে সংস্থাগুলো দায়িত্বশীল নয়। অপরদিকে রাজউকের কারণে এ নগরে পানি রিচার্জের অন্যতম আধার উম্মুক্ত স্থান ও জলাধারগুলো ধ্বংস হচ্ছে। পানি সম্পদ সংরক্ষণের সাথে ৪০টির বেশি সংস্থা এবং প্রায় ২০টির বেশি আইন রয়েছে। তথাপিও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর পানি সম্পদ সংরক্ষণে এ ধরনের উদাসীনতা বাংলাদেশ সংবিধানে অনুচ্ছেদ ১৮ক এর পরিপন্থি।"
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো: আলাউদ্দিন। অন্যান্যেদের মধ্যে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, পবার সম্পাদক মনজুর হাসান দিলু, পবার সহ-সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজিজ, পীসের মহাসচিব ইফমা হোসাইন, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, আইইডির সমন্বয়কারী তারিক হাসান মিঠুল প্রমুখ।
নিউজবাংলাদেশ.কম/টিআইএস/এএইচকে
নিউজবাংলাদেশ.কম