News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:২৯, ১৭ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ১২:১৪, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

শঙ্কিত উৎকণ্ঠিত পরিবহন শ্রমিকরা

শঙ্কিত উৎকণ্ঠিত পরিবহন শ্রমিকরা

ঢাকা: দেশব্যাপী চলছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতাল। এ পরিস্থিতিতে কখন কী ঘটে যায় তা ঠাহর করতে পারছে না বাস চালকরা। ফলে ভয়, শঙ্কা আর উৎকণ্ঠার মধ্যেই দিন কাটছে চালকসহ হেলপার ও কন্ডাক্টরদের। ভীতি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন হিউম্যান হলার বা যাত্রী পরিবহনের সাথে সম্পৃক্ত শ্রমিকদের পরিবার-পরিজনরা।

রাজধানীর বাসাবো, কমলাপুর, গুলিস্তান, ফার্মগেট, গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যাত্রী পরিবহনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।

তিন মাস আগে বিয়ে করেছেন শহিদুল ইসলাম। স্ত্রী নিলুফাকে নিয়ে থাকতেন মিরপুরে। একমাস হলো স্ত্রীকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়েছেন। কারণ বাসে কন্ডাক্টরি করে আগের মতো আর আয় হয় না তার। দিন শেষে আয় হয় শ’ দুয়েক টাকা। এ টাকা দিয়ে একা কোনো রকমে টিকে থাকতে পারলেও নতুন অতিথি নিয়ে সম্ভব হয় না। তার ওপরে রয়েছে ভয়, শঙ্কা আর অনিশ্চয়তা। নিউজবাংলাদেশকে এমনটাই বলেছেন বাহন পরিবহন লিমিটেডের এ কর্মচারী।

মো. পেয়ারু মিয়া চার সন্তান ও স্ত্রী মনিকে নিয়ে থাকেন মুগদাপাড়ায়। চালান ৬ নম্বর গাড়ি (কমলাপুর থেকে গুলশান-২)। প্রতিদিন সকাল ৬টায় বাসা থেকে গাড়ি চালানোর উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। বাসা থেকে বের হতেই শঙ্কিত হয়ে ওঠে মন- ভালোয় ভালোয় বাসায় ফিরতে পারবেন তো? সাথে স্ত্রী ও সন্তানদের বিভিন্ন সাবধান বাণী তো রয়েছেই। এরপরও ১০ থেকে ১৫ বার বাসা থেকে ফোন আসে- নিরাপদে আছেন তো? পরিবারের ফোন ধরতে কখনও বিরক্ত হন, আবার কখনও এই অনিশ্চয়তার মধ্যে কথা বলে ভালোও লাগে। সন্তানদের কথা মনে এলেই উদ্বিগ্ন হয়ে পরেন তিনি- গাড়িতে ভালো যাত্রী না হলে আয় কম হবে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে আর্থিক অনটনে সংসার চালাতে পারবেন কি?

ব্যত্যয় ঘটেনি মো. মহসিন শেখের বেলাতেও। দেশের বাড়ি গোপালগঞ্জে। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে আর বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা সব সময়ই শঙ্কিত থাকেন সন্তানের চিন্তায়। এমনটাই ব্যক্ত করেছেন স্বকল্প পরিবহন লিমিটেডের এই কন্ডাক্টর। মহসিনকে কমলাপুর থেকে চিড়িয়াখানা যেতে হয় প্রতিদিন চার-পাঁচ বার।

৬ নম্বর বাসের চালক মো. শাজাহান, মো. কামরুল হাসান ও মো. মিজানুর রহমানের বক্তব্যও প্রায় একই। তারা প্রত্যেকেই তাদের নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চিত যাত্রার কথা বলেন। প্রতি মুহূর্তই তাদের কাছে ভীতিকর। নাশকতার আশঙ্কায় তাদের গাড়ির একটি (পিছনের) দরজা মালিক সমিতি বন্ধ করে দিয়েছে। সে কারণে যাত্রীও কম হচ্ছে। কমেছে তাদের আয় রেজগারও। তারপরও তাদের গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে বেঁচে থাকার তাগিদে।

তারা জানান, গাড়িতে যাত্রী কম হওয়ার কারণে আয় কমলেও মালিকদের জমা ঠিক মতোই দিতে হচ্ছে তাদের। তবে গাড়ির মালিকরাও আর আগের মতো নিষ্ঠুর নয়, কিছুটা নমনীয় এখন। যা আয় হয় সবাই ভাগ করে নেন। মালিক এখন কিছুটা কম নিয়ে তাদের দিচ্ছেন যাতে করে তারাও বাঁচতে পারেন।

তাদের জানানো হয়েছে, দেশের পরিস্থিতি একটু ভালো হলে গাড়ির দুটি গেটই খুলে দেয়া হবে। আগের মতোই তারা যাত্রী পরিবহন করতে পারবেন। এ পর্যন্ত তাদের ১১টি বাসে আগুন দেয়া হলেও কোনো কর্মচারী দগ্ধ হয়নি।

রয়েল বাস সার্ভিসের (ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া) গাড়ি চালক মো. বাবু শেখ জানান, তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকার মাতুয়াইলে থাকেন। প্রতিদিন তাকে ঢাকার বাইরে যেতে হয়। ফলে ভয়, শঙ্কা ও অনিশ্চয়তাও বেশি। এরপরেও খেয়ে পরে বাঁচার জন্য গাড়ি নিয়ে যেতে হচ্ছে। যতক্ষণ বাইরে থাকেন পরিবার-পরিজনও থাকেন দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠায়। একই পরিস্থিতি তিশা গ্রুপের কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবহনের অন্য গাড়ি চালক ও হেলপারদের ক্ষেত্রেও।

এভাবে প্রচেষ্টা পরিবহন, সিটি বাস, মৈত্রী এক্সপ্রেস, ৮ নম্বর, ৩৬ নম্বর গাড়ির চালক, হেলপার ও কন্ডাক্টরদের মধ্যেও রয়েছে ভয়-ভীতি ও উৎকণ্ঠা। এরপরও পরিবারের কথা মাথায় রেখে যতটা সম্ভব সতর্কভাবে গাড়ি চালানোর চেষ্ঠা করছেন তারা।

প্রসঙ্গত, ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ ও হরতালের আজ ৬৭ দিন চলছে। মানবাধিকর সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ৬ জানুয়ারি থেকে গত ১২ মার্চ পর্যন্ত ১১৫ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই পেট্রোলবোমা হামলায় মারা গেছেন। এর সংখ্যা ৭৩ জন। আর বাকিদের মৃত্যু হয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হেফাজতে ও সহিংসতায়। পেট্রোলবোমা হামলার শিকার হয়েছে প্রায় এক হাজার ২০০ যানবাহন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/টিআইএস/এফই

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়