News Bangladesh

কক্সবাজার সংবাদদাতা || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:৪১, ৩ জানুয়ারি ২০২৫
আপডেট: ১৬:১২, ৩ জানুয়ারি ২০২৫

অবৈধভাবে সৈকত দখল করে মারমেইড বীচ রিসোর্ট 

অবৈধভাবে সৈকত দখল করে মারমেইড বীচ রিসোর্ট 

ছবি: নিউজবাংলাদেশ

কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মারমেইড বীচ রিসোর্ট। ওই বালিয়াড়ি দখলমুক্ত করার অভিযান চলমান থাকলেও রহস্যজনক কারণে এর প্রভাব পড়ছে না এই প্রাইভেট বীচ রিসোর্টে। 

এর আগে মারমেইড বীচ রিসোর্টের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছিল কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ। 

প্রভাবশালী ওই রিসোর্ট মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করায় নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে হিমছড়ি বিট কর্মকর্তা কামরুজ্জামান শোভনকে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওই রিসোর্টটির মালিক আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ ছিলেন কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির কাছের লোক। আর এখন ক্ষমতা দেখানো হচ্ছে একটি রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতার। 

গত ২১ নভেম্বর রামু পেঁচারদ্বীপ সৈকতের বালুচরের ওপর নির্মিত অন্তত ৫ একর এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করা হলেও আবারও সেই স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে একই স্থানে। বালিয়াড়িতে স্থাপনা গড়ে সেখানে করা হয়েছে ‘ফুল মুন পার্টি’। অভিযানকালে কাঠের সেতু ভাঙা হলেও ফের তা মেরামত করে চালু করা হয়েছে বালিয়াড়িতে থাকা রিসোর্টগুলো। 

রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল জানান, গত মাসে অভিযান পরিচালনা করা হলেও আবারও স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে কিনা তা জানা নেই। 

এদিকে গত ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রায় ২০ একর জমিতে জেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও তৎকালীন কিছু এমপি মন্ত্রীর দাপট দেখিয়ে সেই জমি দখলে নিয়ে তৈরি করেছে ‘মারমেইড বীচ রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ’। 

বেশ কিছুদিন আগে থেকে রিসোর্টের এলাকা বাড়াতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে দরিয়ানগর সৈকতের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় প্রাকৃতিক খাল ভরাট করে রেস্তোরাঁ  তৈরির চেষ্টা চলছিল। 

অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিক মন্ত্রী-প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে সম্পর্কের বলয় দেখিয়ে একের পর এক সমুদ্রের বালিয়াড়ি দখল করেছেন রিসোর্টটির মালিক আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ। নিজেকে শেখ পরিবারের একজন দাবি করা সোহাগ দখলবাজি চালিয়ে গেলেও অজানা কারণে গত ১৫ বছর প্রশাসনের কেউ সেদিকে নজরও দেননি। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি প্রশাসনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বহমান খালের ওপর অবৈধ একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতুর ওপর দিয়ে যেতে হয় সেই বিশেষ ডিজে ও মদ পার্টির জোনে। তবে সেতুর কারণে খালে নৌকা চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে বরাবরই। পর্যটনের দোহাই দিয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চললেও প্রশাসনের নীরবতায় প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয় লোকজনের মনে। 

অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজারে ভিআইপি লোকজন আসলে এই রিসোর্টে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন অনেকে। রিসোর্টের মালিক সোহাগ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন  কর্মকর্তার নাম দিয়ে বেশ বিশাল বালিয়াড়ি দখল করে সমুদ্র সৈকতে গড়ে তুলেছেন বিশাল সাম্রাজ্য। এই বালিয়াড়ি যেন তার নিজস্ব সম্পদ এমনভাবে ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে। 

নামমাত্র কিছু জায়গা ‘মারমেইড বীচ রিসোর্টর নামে থাকলেও তার কয়েকগুণ অবৈধ দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে সামাজিক অবক্ষয়, উঠতি বয়সের যুবক-শিক্ষার্থীরা লিপ্ত হচ্ছে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। 

এ ছাড়াও অবৈধ দখলদারিত্বের কারণে সরকার যেমন হারিয়েছে জমি, তেমনি পরিবেশ প্রকৃতির ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান সমাজের সচেতন নাগরিকরা। 

বর্তমানে পর্যটন মৌসুম হওয়ার কারণে এখন  প্রতিষ্ঠানটি ডিজে ও মদের পার্টির জন্য বিশেষ জোন তৈরি করেছে ঝাউবাগানে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফুল মুন বীচ পার্টি’। এটা করতে গিয়ে কাটা পড়েছে শত শত ঝাউগাছ। উপড়ে ফেলা হয়েছে সমুদ্রসৈকত রক্ষায় রোপণ করা ঝাউবীথি। যার ফলে পরিবেশের পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশের একমাত্র মেরিন ড্রাইভ সড়ক। 

সম্প্রতি সরেজমিনে মারমেইড রিসোর্টে দেখা যায়, পর্যটক বা স্থানীয় লোকজন সেতু দিয়ে সেখানে প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়। পরে বিশেষ টোকেন হাতে দেওয়ার পর প্রবেশ করতে পারেন পর্যটকরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কৌশলে সেই সেতু দিয়ে বিশেষ জোনে গিয়ে দেখা মিলে শত শত ঝাউবীথি কেটে তৈরি করা হয়েছে নাচ-গানের মঞ্চ, কফিশপ, মদের বারসদৃশ্য বিশেষ জোন। এটি মূলত সমুদ্রে গজিয়ে ওঠা চর। 

জানা গেছে, জায়গাটিতে ঝাউবীথি রোপণ করেছিল উপকূলীয় বন বিভাগ। যেগুলো কেটে স্থাপনা তৈরি করেছে মারমেইড কর্তৃপক্ষ।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়