ঋণ না পেয়ে খালি হাতে ফিরেই সংগঠকের বাড়ি ঘেরাও
ঋণ না পেয়ে খালি হাতে ফিরেই সংগঠকের বাড়ি ঘেরাও। ছবি: সংগৃহীত
বিনা সুদে ঋণের আশ্বাস দিয়ে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের ডাকা সমাবেশে যোগ দেওয়াতে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় লোকজন নিয়ে গিয়েছিলেন দবির হোসেন নামে এক ব্যক্তি। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন স্ত্রীসহ চারজন।
প্রলোভনে পড়ে সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকালে যারা মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন, তারা খালি হাতে ফিরে এসে প্রতারক দবির হোসেনের বাড়ি ঘেরাও করেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
আটক করা হয় ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের’ সদস্য দবির হোসেন, তার স্ত্রী চামিলি আক্তার এবং সহযোগী হাসিনা আক্তার, সিংগাইরের জহুরা বেগম ও দেলোয়ার হোসেনকে।
জানা যায়, দবির ও তার সহযোগীরা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মানিকগঞ্জের বেশ কিছু এলাকার সাধারণ মানুষকে মানিকগঞ্জ থেকে সাতটি বাসে করে সোমবার সকালে ঢাকায় নিয়ে যান। রাজধানীর শাহাবাগ যাওয়ার পর পরিস্থিতি খারাপ দেখে ওইসব বাসে করেই মানিকগঞ্জ ফিরে আসেন তারা। এরপর মানিকগঞ্জ জরিনা কলেজ এলাকায় দবির হোসেনের বাড়ি ঘেরাও করেন তারা।
প্রতারণার শিকার রোকসানা আক্তার বলেন, আমাগো বিনা সুদে ঋণ দিবো কইয়া ঢাকায় নিয়া গেছে। আমরা তো জানি না ওইহানে আন্দোলন হইবো। ঢাকায় যাওয়ার পরই দেখি মারামারি হইতাছে। আমাগো বাসে ওইঠা কয়েক জনকে লাঠি দিয়া বারিও দিছে। টাকা তো বড় কথা না বাঁইচা বাড়ি আসতে পারছি এতই শুকরিয়া জানাই।
রোকসানা আক্তার জানান, বিনা সুদে ঋণ পাওয়ার আশায় শাহবাগে গিয়েছিলেন। তাকে দবির বিনা সুদে ঋণের লোভ দেখিয়ে ঢাকার শাহবাগে পাঠিয়েছিল। শুধু রোকসানাকেই নয় দবির হোসেন ও তার স্ত্রী চামিলী আক্তার এবং হাসিন আক্তার মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩০০ জন সহজ সরল লোককে একই লোভে শাহাবাগে পাঠায়। এই অভিযোগে দবির, চামিলী ও জহুরাকে পুলিশ আটক করে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিনা সুদে লাখ টাকা থেকে কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে সকাল ৬টার দিকে ৬টি বাসের মাধ্যমে তাদেরকে শাহাবাগে পাঠানো হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে বাস ভাড়া বাবদ ২৫০ টাকা করে নেওয়া হয়ে বলেও জানা গেছে।
পরে শাহাবাগের পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে তারা ওই গাড়িতেই ফিরে আসে। এর পরে দবির হোসেনের বাড়ি ঘেরাও করে সাধারণ মানুষ। পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে অভিযোক্তদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। বিক্ষুব্ধ জনগণ তাদের শাস্তির দাবি করেন।
ভুক্তভোগী হেলেনা বেগম জানান, সুদমুক্ত টাকা দেবে বলে দবির, হাসিনা ও চামিলী আমাদেরকে ঢাকা পাঠায়। ঋণ নেওয়ার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দবিরের অফিসে দিয়ে যাই। এসময় আমাদের কাছ থেকে ২৫০ টাকা করে নেয় তারা। তিনি জানান, আমরা প্রায় ৩০০ জন ৬টি বাসে শাহাবাগে গিয়েছিলাম।
আরও কয়েক জন ভুক্ত ভোগীরা জানান, আমরা শাহবাগে নামার পর লোকজন আমাদের মারধর করে। পুলিশ আমাদের গাড়িগুলো ফিরিয়ে দেয়। পরে আমরা চলে আসি।
মানিকগঞ্জ ফিরেই প্রতারিত জনতা দবিরের বাড়ি ঘেরাও করেন এবং ২৫০ করে দেওয়া টাকা ফেরত চান। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস. এম. আমানুল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় প্রতারক দবির ও তার স্ত্রীসহ চার সহযোগীকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি