দেনার দায়ে ঘর বিক্রি করে জীর্ণ ডেরায় বসবাস
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের ফরাশগঞ্জ গ্রামের আবুল কাশেমের বাড়ির ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা শামছুন্নাহার। নিজের থাকার ঘর বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করে এখন জীর্ণ ডেরায় বসবাস করছেন তিনি।
দরিদ্র এ পরিবার পায়নি কোনো সরকারি সহযোগিতা। তাদের খবর নেননি কোনো জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, শামছুন্নাহারের স্বামী আবুল কালাম ২০০৫ সালে অসুস্থ হয়ে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে টানাপোড়েনের সংসার চলতো অন্যের জমিতে ও বাড়িতে কাজ করে। এখন আর শরীরে কুলায় না। রোগে শোকে বেঁচে থাকার স্বাদটাই যেন দিনদিন হারিয়ে ফেলেছেন এ বৃদ্ধা।
ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে আলাদা থাকেন। স্থানীয় একটি ইটভাটায় কাজ করে কোনোমতে চলে তার সংসার। মেয়েদের বিয়ে দিলেও ছোট মেয়ে শেফালী আক্তারের (৩০) স্বামী মো. শাহজাহান নিরুদ্দেশ হয়ে যান বিয়ের কয়েক মাস পরে।
স্বামী পরিত্যাক্ত মেয়ে শেফালী এখন একমাত্র পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি। গার্মেন্টসে কাজ করে সংসার চালান। কিন্তু ঘর করার সময় এতো অর্থ নেই তার। ফুটফুটে চার বছরের শিশু বাচ্চা হাবিবকে ফরাশগঞ্জ গ্রামে মায়ের কাছে রেখে চট্টগ্রামে গিয়ে গার্মেন্টসে কাজ করেন। মাঝে মাঝে বাড়ি এসে মাকে আর সন্তানকে দেখে আবার চলে যান কাজে।
স্থানীয় আলোকিত পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক এবিএম নোমান হোসেন বলেন, “শামছুন্নাহার ও তার মেয়ে শেফালীর খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে দেখে চার বছর পূর্বে সামাজিক সংগঠন আলোকিত পাঠাগারের উদ্যোগে বিভিন্ন ব্যক্তির সহায়তা নিয়ে শামছুন্নাহারকে একটি টিনের ঘর তৈরি করে দিই। কিন্তু বেশিদিন সেই ঘরে থাকা হলো না শামছুন্নাহারের। হঠাৎই কঠিন অসুখে পড়েন তিনি। লক্ষাধিক টাকা লেগে যায় তার সুস্থতার জন্য। মাকে সুস্থ করতে গিয়ে মেয়েদের বিক্রি করতে হয়েছে সেই ঘর। ঘর বিক্রি করে চিকিৎসার সময় ধার করা টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে তাদের।”
আক্ষেপের সুরে শামছুন্নাহার বলেন, “বাবারে আমি কোনো বয়স্ক, বিধবা ভাতা পাইনা, আমার মেয়েটা স্বামী পরিত্যাক্ত সেই কিছু পায়নি। আমাগো নতুন ঘরে হোতা আংগো ভাইগ্যে নাই, মাডিতে হুতি হারা জীবন কাডাইছি, মাডিতেই চলি যাইবো মরার পর।
শামছুন্নাহারের মেয়ে শেফালী বেগম বলেন, “আমাদেরতো কতবছর কোনো ঘরই আছিল না। একটা ঘর করে দিছিল আংগো গেরামের আলোকিত পাঠাগার। মার অসুখের সময় হেই ঘরও বেচি দিছি। নইলে মারে বাঁচানো যাইতো না। আমাদের কে সহযোগিতা করবো বলেন?”
শেফালী আরো বলেন, “নিরুপায় হয়ে আমার ছোড হোলারে মার কাছে রাখি গার্মেন্টসে এসে কাজ করি। মন মানে না কিন্তু কি করবো ভাই। আল্লাহ গরিব বানাইছে আংগোরে। এইবার ঘর নিজেই করবো চিন্তা করছি। এই তিন বছরে গার্মেন্টসে কাজ করে সংসারে টিয়া দিয়ে ১০ হাজার টাকা জমাইছি। আর কতবছর গেলেই ঘরের টাকা জমা হইবো, কিন্তু ততদিন কি তার মা বাইচ্ছা থাকবো?”