ঝিনাইদহে সমলয় প্রকল্পে কৃষকের টাকা লোপাট
ঝিনাইদহ কৃষি অধিদপ্তরের সমলয় প্রকল্পে ধান চাষ যেন মাছের তেলে মাছ ভাজা। বীজতলা তৈরি থেকে ধান মাড়াই পর্যন্ত এই প্রকল্পে কৃষকদের নামমাত্র সহায়তা করে বাকি টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অথচ এই প্রকল্পে ১৪ লাখ টাকার ব্যয় দেখানো হয়েছে। চারা রোপণের পরে সনাতন পদ্ধতিতেই হয়েছে চাষাবাদ। সব কিছু কৃষকের নিজ খরচে। এ প্রজেক্টে সরকারের প্রণোদন কর্মসূচির আওতায় আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা ছিল।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, এ প্রণোদনার আওতায় ৫০ একর জমিতে অধিক ফলনশীল সুবর্ণ-৩ হাইব্রিড বোরো ধান আবাদের জন্য সাড়ে চার হাজার ট্রে-তে (১০০ টাকা মূল্যমানের ট্রেতে) বোরো বীজতলা তৈরি করে তুলনামূলকভাবে কম খরচে কৃষকদের অধিক লাভবানের ব্যবস্থা করা হয়। গাগান্না গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে আলমাসের ২০ শতক জমিতে বীজ বপণ করা হয়। সেখান থেকে উৎপাদিত চারা এ প্রকল্পের চাষিদের দেয়া হয় রোপণ করার জন্য।
প্রকল্পের বেশির ভাগ কৃষক অভিযোগ করেছেন, মাত্র একবার তারা সার পেয়েছেন কৃষি অফিস থেকে। তাও মাপে সঠিক ছিল না। একবার জমির পরিমাণ অনুসারে পচনরোধী ওষুধ দেয়া হয়েছে। কীটনাশক সবাইকে দেয়া হয়নি। ফেব্রুয়ারি মাসে এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হলে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম আশপাশের অন্য কৃষকদের তালিকায় নাম ঢুকিয়ে সার দেন। ওই জমিগুলো প্রথমে এই প্রজেক্টের আওতায় ছিল না। প্রকল্পে ৫০ একর জমি থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে নেই বলে অভিযোগ। অন্তর্ভুক্ত কৃষকদের আগাছা দমন, সেচ ও পরবর্তীতে আরও দুই বার নিজ খরচে সার প্রয়োগ করতে হয়েছে।
রাজনগর গ্রামের নজির মন্ডলের ছেলে দলুর এ প্রকল্পে ৪০ শতক জমি রয়েছে। তিনি জানান, কৃষি অফিস থেকে তিনি মোট ৪০ কেজি সার পেয়েছেন। আলমাসের ডিপটিউবয়েল থেকে তিন হাজার টাকা বিঘা চুক্তিতে সেচ দিয়েছেন। তাকে পচনরোধী ওষুধ দেয়া হয়নি। কিটনাশকও দেয়া হয়নি। রাজনগর গ্রামের আবু বকর মন্ডলের ছেলে মুকুলও এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত চাষি। তিনিও একই অভিযোগ করেন। গাগান্না গ্রামের কলম চৌধুরীর ছেলে রফি চৌধুরীর এই প্রকল্পে ৩০ শতক জমি রয়েছে। বুধবার তার ১২ শতক জমির ধান কাটা হয়েছে মেশিন দিয়ে। তিনি ও তার স্ত্রী জানান, তারা শতক প্রতি এক কেজি সার পেয়েছেন এক বার। এর পরে ধান কাটার সময়ে আবার কৃষি অফিস থেকে যোগাযোগের পর তারা ধান কাটতে এসেছেন।
রাজনগর গ্রামের গাজী উদ্দিনের ছেলের স্বপনের এই প্রকল্পে ১৮ শতক জমি রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা নিজ খরচে জমি পাকিয়েছি। আমাদের যে চারা দেয়া হয় সেটা রোপণের পর অনেক চারা মারা যায়।”
স্বপন বলেন, তিনি সার পেয়েছেন শতক প্রতি এক কেজি করে এক বার। পচনরোধী ওষুধ দেয়া হয়েছিল কিন্তু অনেক পরে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর প্রকল্পে দায়িত্বে থাকা দুজন বণ্টক সুপার ভাইজার নাজমুল হাসান ও লতিফ উর রহমানকে তড়িঘড়ি করে অন্য উপজেলায় বদলি করা হয়।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিমের কাছে এই প্রকল্পের তথ্য চেয়ে আবেদন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের কোনো তথ্য দেননি। ঈদের পর তথ্য দেবেন বলে জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি বিদেশ যাওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি নিয়েছেন। যাওয়ার আগে নানা খাত থেকে দুর্নীতি করে টাকা পকেটস্থ করছেন। সমলয় প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতি প্রসঙ্গে ডিডি আজগর আলী বলেন, “আমি মাত্র দু মাস আগে এসেছি, তাই এই প্রকল্প সম্পর্কে আমি কোনো তথ্য দিতে পারবো না।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ