News Bangladesh

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ২৮ এপ্রিল ২০২১

ইকোপার্কে পৌরসভার ময়লা, সচিবসহ ১২ জনকে নোটিস

ইকোপার্কে পৌরসভার ময়লা, সচিবসহ ১২ জনকে নোটিস

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চল বর্ষিজোড়া ইকোপার্কের জায়গায় মৌলভীবাজার পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া, আবর্জনা পরিবহণের সুবিধার্থে রাস্তা প্রশস্ত করতে মৌলভীবাজার স্টেডিয়াম সংলগ্ন বনের টিলা কেটে মাটি সরানো হয়েছে।

এতে এলাকার পরিবেশ দূষণ থেকে বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখ করে ভূমি, স্থানীয় সরকারসহ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তিন সচিবসহ ১২ জনকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।

গত ২১ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পৌরসভার ময়লার ভাগাড়, জীববৈচিত্র্য হুমকিতে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

বেলা’র সিলেটের সমন্বয়ক শাহ সাহেদা মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “বেলার প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। পরে বেলার আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর সোমবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে ১২ জনের কাছে এ নোটিশ পাঠান।”

তিনি বলেন, “নোটিস পাঠানোর সাত দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় এলাকাবাসীর পরিবেশগত অধিকার ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে সবার বিরুদ্ধে বেলা আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’

ভূমি, স্থানীয় সরকারসহ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তিন সচিব ছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বন সংরক্ষক, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, সিলেট সদরদপ্তর বর্ষিজোড়া, মৌলভীবাজার, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র, সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মৌলভীবাজারের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকসহ মোট ১২ জনকে এ নোটিস পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ওই নোটিসে বলা হয়, গত ৪ এপ্রিল থেকে শহরের ময়লা আবর্জনা ও প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার কারণে বনের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে ও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে— যা বন, বন্যপ্রাণীসহ পশুপাখি এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ময়লা আবর্জনার জন্য পরিবেশ দূষিত হলে গুরুত্বপূর্ণ স্থান স্টেডিয়ামে আসা দর্শনার্থীসহ বর্ষিজোড়া ইকোপার্কে আগত পর্যটকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বন বিভাগের মালিকানাধীন এই ইকোপার্কের (খতিয়ান নম্বর ৩) ৪ নম্বর দাগের ২০১ একরের মধ্যে প্রায় এক একর জায়গায় ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। বন বিভাগের লিখিত আপত্তি সত্ত্বেও বনের জায়গায় বেআইনিভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখা এক ধরনের জবরদখলের শামিল।

সবপ্রকার ময়লা আবর্জনা ও প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করে বর্জ্য ডাম্পিং কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে, টিলা কাটা বন্ধ করতে হবে ও কাটা অংশে দেশীয় প্রজাতির গাছ দ্বারা বনায়ন করতে হবে এবং এ কাজের জন্য ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবি জানিয়েছে বেলা।

যোগাযোগ করা হলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “এই জমিটুকু আমাদের বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক তথা বনবিভাগের। এখানে পৌর কর্তৃপক্ষের শহরের বিভিন্ন ময়লা ও আবর্জনা ফেলা মোটেও ঠিক হয়নি। তাছাড়া বনের টিলা কেটে অবৈধভাবে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়রকে ময়লা ফেলা বন্ধ ও রাস্তা নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু তাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে।”

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পৌর মেয়র মো. ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “পরিত্যক্ত জমি থাকায় সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। তবে বন বিভাগের কাছ থেকে এ বিষয়ে আপত্তি পাওয়া গেছে। সাময়িকভাবে ফেলা হচ্ছে। আমাদের ডাম্পিং স্টেশন হয়ে গেলে ময়লা ফেলার কোনো অসুবিধা হবে না।”

বনের টিলা কেটে অবৈধ কোনো রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান  বলেন, “আইনশৃঙ্খলা সভায় ডিএফও সাহেব বিষয়টি উপস্থাপন করেন। আমি বন বিভাগকে বলেছি, তারা তাদের সীমানায় তারের বেড়া তৈরি করবে। বিতর্কিত এলাকায় যেন পরবর্তিতে বর্জ্য ফেলা না হয়, সেটা পৌর মেয়রকে বলা হয়েছে।”

যারা বিধি অমান্য করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান জেলাপ্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়