কারখানার বর্জ্যে করতোয়ায় মরছে কোটি টাকার মাছ
পঞ্চগড়: পঞ্চগড় চিনিকল ও এশিয়া ডিস্ট্রিলারিজের নামে দুটি ভারি শিল্প-প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত বর্জ্যে করতোয়া নদীর তিনটি মৎস্য অভয়াশ্রমের প্রায় কোটি টাকার মাছ মরতে শুরু করেছে। মাছ মরে যাওয়ায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে প্রায় সাত শতাধিক মৎস্যজীবীর রুটি-রোজগার।
জেলার বোদা উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীতে নলকুড়া, টেকরামনি ও বোয়ালমারী মৎস্য অভয়াশ্রমের প্রায় ১০ কিলোমিটার মৎস্য আহরণ এলাকায় ওই শিল্প প্রতিষ্ঠান দুটির বর্জ্য ছড়িয়ে পড়লে পুরো নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে যায়।
শুক্রবার সকাল থেকে করতোয়া নদীর ওই অভয়াশ্রম গুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে উঠলে স্থানীয় লোকজনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নদীতে মাছে ভেসে উঠতে দেখে মৎস্যজীবী ছাড়াও সাধারণ মানুষ ছোট-বড় জাল ও মাছ ধারার সরঞ্জাম নিয়ে মাছ ধরতে নদীতে নেমে পড়েন। এ সময় স্থানীয়দের আইর, বোয়াল, মৃগেল, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫ থেকে ১২ কেজি ওজনের প্রায় কয়েশ মণ মৃত ও অর্ধমৃত মাছ ধরে স্থানীয় হাট-বাজার ও আড়তে বিক্রি করতে দেখা যায়।
খবর পেয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আউয়াল, বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজনুর রহমান ও বোদা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মকছেদুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পঞ্চগড় চিনিকল ও এশিয়া ডিস্ট্রিলারিজের বিষাক্ত বর্জ্য করতোয়া নদীতে ফেলা হলে তা মুহুর্তের মধ্যে পুরো নদীর পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। নদীর পানির কালচে রং ধারণ করে ও বিষাক্ত হয়ে যায়। এর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অভয়াশ্রম সহ নদীর মাছগুলো বিভিন্ন জায়গায় ভেসে উঠতে শুরু করে। বিষয়টি জানানজানি হলে সকাল থেকেই শত শত নারী-পুরুষ ভেসে ওঠা ও অর্ধমৃত মাছ ধরতে নদীতে নামে।
নলকূড়া মৎস্য অভয়াশ্রম সমবায় সমিতির সভাপতি মো. ইব্রাহিম জানান, “দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চগড় চিনিকল লিমিটেড ও এশিয়া ডিস্ট্রিলারিজ লিমিটেড এর বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি ফুলতলা এলাকা দিয়ে করোতোয়া নদীতে ফেলা হচ্ছিল। বিষয়টি আমরা বার বার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোন ফল হয়নি। অভয়াশ্রমগুলোর মাছ মরে যাওয়ায় আমাদের ৬ থেকে ৭শ মৎস্যজীবীর রুজি-রোজগার অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।”
পঞ্চগড় চিনিকলের ব্যবস্থপনা পরিচালক মোঃ আব্দুর রশীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “চিনিকলের বর্জ্য শোধনশেষে নদীতে ফেলা হয়। তাতে কোনো বিষক্রিয়া থাকে না।
অপরদিকে এশিয়া ডিস্ট্রিলারিজের পঞ্চগড়ের ব্যবস্থাপকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বোদা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মকছেদুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, “ওই দুই কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পানিতে মিশে পানিতে অক্সিজেনের পরিমান কমে যাওয়ায় অ্যামোনিয়ার সৃষ্টি হয় । এতে ধীরে ধীরে মাছগুলো মরতে শুরু করে। পরীক্ষার জন্য নদীর পানি সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হবে। এ ঘটনায় দায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ
নিউজবাংলাদেশ.কম