ছয় শিল্প এলাকার করোনা চিত্র
আক্রান্ত শ্রমিকের ৭৩ শতাংশ পোশাক কারখানার
সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে দীর্ঘ এক মাস বন্ধ থাকার পর গত ২৬ এপ্রিল থেকে পর্যায়ক্রমে সচল হয় দেশের ছয় শিল্প এলাকার কারখানাগুলো। এরপর আবার ঈদের ছুটি এবং ছুটি শেষে শ্রমিকদের কাজে যোগদান। কারখানা ‘বন্ধ-খোলা-বন্ধ’ চক্রে পড়ে অনেক শ্রমিকই কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়িতে আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। সেই সঙ্গে ঝুঁকি বাড়িয়েছিল কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার। এরই মধ্যে শ্রমঘন শিল্প-কারখানাগুলোর আড়াই শতাধিক শ্রমিক কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্ত এসব শ্রমিকের ৭৩ শতাংশই পোশাক কারখানার।
গত ২৩ মে পর্যন্ত কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়া শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১৭০। এরপর গত ১ জুন পর্যন্ত সাতদিনে এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৫১। আক্রান্ত এসব শ্রমিক বিভিন্ন খাতের মোট ১২৯টি কারখানার সঙ্গে যুক্ত, যার ৭২টিই পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য কারখানা। আর মোট ২৫১ আক্রান্ত শ্রমিকের মধ্যে ১৮৪ জন বা ৭৩ শতাংশই পোশাক কারখানার।
শিল্প কেন্দ্রীভবনের কারণেই ছয় শিল্প এলাকায় পোশাক কারখানার সংখ্যা বেশি। ছয় শিল্প কারখানায় শুধু পোশাক খাতের কারখানাই আছে ২ হাজার ৮৯৩টি। এ খাতেরই ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বস্ত্র শিল্পের কারখানা আছে ৩৮৯টি। এছাড়া বেপজার আওতায়ও আছে বস্ত্র ও পোশাক খাতের কারখানা। এভাবে ছয় শিল্প এলাকায় মোট ৭ হাজার ৬০২টি কারখানার মধ্যে পোশাক খাতকেন্দ্রিক কারখানার সংখ্যা ৩ হাজার ৩৭২। কোভিড-১৯ আক্রান্ত শ্রমিক সংখ্যায়ও কেন্দ্রীভবনের প্রতিফলন দেখা গেছে।
শিল্পসংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য বলছে, আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও ময়মনসিংহ—এই ছয় শিল্প এলাকায় পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য কারখানা আছে ১ হাজার ৮৮২টি, যার ৫১টিতে কভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছেন ১২৬ জন শ্রমিক। আরেক সংগঠন বিকেএমইএ সদস্য কারখানা আছে মোট ১ হাজার ১০১টি, যার ২১টিতে আক্রান্ত শনাক্ত শ্রমিক ৫৮ জন। পোশাক শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতের সংগঠন বিটিএমএ সদস্য মোট ৩৮৯ কারখানার মধ্যে দুটি কারখানায় তিনজন শ্রমিক কভিড আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন।
রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতাভুক্ত ছয় শিল্প এলাকায় মোট ৩৬৪ কারখানার মধ্যে ৩৯টিতে করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৪৬ জন শ্রমিক। অন্যান্য খাতের ৩ হাজার ৮৬৬টি কারখানার মধ্যে ১৬টির ১৮ জন কভিড-১৯ আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন।
খাত ও এলাকাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আশুলিয়া এলাকায় করোনা শনাক্ত হওয়া মোট ৬২ শ্রমিকের ৫৯ জনই বিজিএমইএ সদস্য কারখানায় কাজ করেন। এই এলাকায় বিকেএমইএ সদস্য কোনো কারখানায় কভিড-১৯ আক্রান্ত শ্রমিক শনাক্ত হয়নি।
গাজীপুর এলাকায় আক্রান্ত শনাক্ত হওয়া মোট ৬৬ শ্রমিকের ৫৯ জন বিজিএমইএ সদস্য ২১ কারখানার। এছাড়া বিকেএমইএর সদস্য তিনটি কারখানার চারজন শ্রমিক কভিড-১৯ আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। এই পোশাক খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বস্ত্র শিল্প মালিক সংগঠন বিটিএমএর সদস্য একটি কারখানার একজন শ্রমিক কভিড আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম এলাকার মোট আক্রান্ত শনাক্ত ৪৮ শ্রমিকের একজন বিজিএমইএ সদস্য একটি কারখানার। এছাড়া বিকেএমইএর একটি সদস্য কারখানার একজন শ্রমিকও কভিড আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। চট্টগ্রাম এলাকায় বিটিএমএ সদস্য কারখানায় কভিড আক্রান্ত শ্রমিকের তথ্য পাওয়া যায়নি। এ এলাকায় রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের আওতাধীন কারখানার শ্রমিকই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। চট্টগ্রামের মোট আক্রান্তের ৩৯ জনই বেপজার আওতাধীন কারখানার। ওই এলাকায় অন্যান্য খাতের ছয়টি কারখানার সাতজন শ্রমিক কভিড আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ এলাকার বিজিএমইএ সদস্য দুটি কারখানার দুজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। আরেক সংগঠন বিকেএমইএর সদস্য ১৭ কারখানার আক্রান্ত শনাক্ত শ্রমিকের সংখ্যা ৫৩। এ এলাকায় বিটিএমএ সদস্য কোনো কারখানায় কভিড-১৯ আক্রান্ত শ্রমিকের তথ্য পাওয়া যায়নি। নারায়ণগঞ্জে বেপজার আওতাধীন ছয় কারখানার সাতজন শ্রমিক কোভিড-১৯ আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য খাতের চারটি কারখানার পাঁচজন শ্রমিক কভিড-১৯ আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন।
ময়মনসিংহ এলাকায় মোট কোভিড আক্রান্ত বলে শনাক্ত হওয়া সাতজন শ্রমিকের পাঁচজনই বিজিএমই সদস্য তিনটি কারখানার। এছাড়া ওই এলাকায় কোভিড আক্রান্ত শ্রমিকদের বাকি দুজন বিটিএমএ সদস্য একটি কারখানার। খুলনা এলাকায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত বলে শনাক্ত একজন শ্রমিক অন্যান্য খাতের কারখানার।
শুধু এলাকাভিত্তিক হিসাবে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত শনাক্ত শ্রমিক নারায়ণগঞ্জ শিল্প এলাকার। সেখানে ২৯টি কারখানার ৬৭ জন শ্রমিক আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। রোগীর সংখ্যা এর পরই সবচেয়ে বেশি গাজীপুরের। ওই এলাকার ২৭টি কারখানার ৬৬ জন শ্রমিক কভিড-১৯ আক্রান্ত। ২৭টি কারখানার ৬২ জন শ্রমিক আক্রান্ত শনাক্ত আশুলিয়া এলাকায়। ময়মনসিংহ এলাকার চারটি কারখানার সাতজন শ্রমিক কভিড আক্রান্ত। খুলনা এলাকায় একটি কারখানার একজন শ্রমিক কোভিড আক্রান্ত বলে শনাক্ত।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ