হাসপাতাল থেকে রোগী ফিরিয়ে দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ: তথ্যমন্ত্রী
চিকিৎসার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হাসপাতাল থেকে রোগী ফিরিয়ে দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে জানিছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার (২ জুন) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
‘বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে’ এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, যারা এ সময়ে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে পিছপা হচ্ছে এবং তাদের অবহেলার কারণে রোগীরা মৃত্যুবরণ করছে, তারা আসলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছে। আমি আশা করবো যে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোসহ কোনো হাসপাতালই এ ধরনের আচরণ করবে না। এখনই সময় আর্তমানবতার সেবায় হাতকে প্রসারিত করা।
‘তবে অনেক ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা এ পরিস্থিতির মধ্যেও নিজের জীবনকে বিপন্ন করে মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন, তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই, অভিনন্দন জানাই, তারা সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য, মানুষকে সেবা না দিয়ে হাসপাতাল যদি হাত গুটিয়ে নেয়, সেটিকে তখন আর হাসপাতাল বলা যায় না। আমি নিজেও ব্যথিত যে, প্রায়ই আমরা সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি- বিভিন্ন রোগী একটার পর আরেকটা হাসপাতালে যাচ্ছেন, কিন্তু হাসপাতাল ভর্তি নিচ্ছে না। আজকেও কাগজে দেখলাম, সিলেটে একে একে ছয়টি প্রাইভেট হাসপাতালে একজন রোগী গেছেন, তাকে কোনো হাসপাতালে ভর্তি নেয়নি। সেই রোগী শেষে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন। এগুলো অত্যন্ত দুঃখজনক ও প্রাইভেট বা যেকোন হাসপাতালের এ ধরনের আচরণ অগ্রহণযোগ্য।
এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকার এগুলো পর্যবেক্ষণ করছে, ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, কেউ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে অবহেলা করলে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনও পর্যন্ত হুঁশিয়ারির মাধ্যমে তাদের সেবামুখী করার চেষ্টা করা হলেও অবহেলার ঘটনা ক্রমাগত ঘটতে থাকলে অতি শিগগিরই কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার।’
সম্প্রতি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে হাছান মাহমুদ বলেন, এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিক তদন্তে বলেছে, ইউনাইটেড হাসপাতালের গাফিলতি ছিল। সুতরাং হাসপাতালটিতে যে পাঁচজন মারা গেছেন, তাদের মৃত্যুর দায় কোনভাবেই ইউনাইটেড হাসপাতাল এড়াতে পারে বলে আমি মনে করি না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পর চলমান স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমি এবিষয়ে বলতে চাইনি, কিন্তু যেহেতু আপনারা প্রশ্ন করেছেন এবং যেহেতু বাংলাদেশে পান থেকে চুন খসলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিবৃতি দেয়, মানবাধিকার নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলে, এমনকি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানবাধিকার নিয়েও তারা প্রতিবছর রিপোর্ট পেশ করে, সেজন্য বলছি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে গত ২৫ মে পুলিশ যেভাবে একজন আফ্রিকান-আমেরিকানকে গলার ওপর চেপে ধরে তাকে হত্যা করলো, এটি সেখানকার মানবাধিকারের কি পরিস্থিতি, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের সংখ্যা অনেক কম হলেও পুলিশের হাতে মৃত্যুবরণকারী কৃষ্ণাঙ্গদের সংখ্যা শ্বেতাঙ্গদের তিনগুণ উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, সেখানে যারা অভিবাসী হতে অবৈধভাবে প্রবেশ করে, তাদের সন্তানদের বাবা-মার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বাবা-মাকে তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর মাসের পর মাস, বছরের পর বছর শিশুদের আটকে রাখার পর দেখা যায়, তারা তাদের বাবা-মাকে চেনে না। এসব অমানবিক কাজই সেখানকার মানবাধিকারের পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি