News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:২৫, ১ জুন ২০২০
আপডেট: ১৭:০০, ১০ জুলাই ২০২০

চিৎকার করে খাবার চাইলেও কেউ দেননি সাহাব উদ্দিনকে!

চিৎকার করে খাবার চাইলেও কেউ দেননি সাহাব উদ্দিনকে!

গত রোববার হাসপাতাল থেকে আসার পর থেকে পরিবারের কেউ সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেননি। দুপুরে তাকে খাবারও দেননি। বিকেলে তার শ্বাসকষ্ট ও কাশি বেড়ে যায়। এ সময় তিনি চিৎকার করে খাবার চাইলেও কেউ দেননি।তাকে শয়নকক্ষে রেখে বাইরে থেকে দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে রাখেন পরিবারের সদস্যরা। ছোট ছেলে এগিয়ে যেতে চাইলে তাকে বোনেরা বাধা দেন। এভাবে চিৎকার করতে করতে রাত ১০টার দিকে সাহাব উদ্দিনের মৃত্যু হয়। রাতে সাড়াশব্দ না পেয়ে পরিবারের লোকজন জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন তিনি মারা গেছেন। এরপর সবাই যার যার ঘরের দরজা বন্ধ করে ভেতরে ঢুকে যান। পরে ছোট ছেলে 'বাবা মারা গেছে' বলে চিৎকার শুরু করেন।

ফেনীর সোনাগাজীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এভাবেই মারা যান সাহাব উদ্দিন। ইউপি চেয়ারম্যান মৃত সাহাব উদ্দিনের ছোট ছেলের বরাত দিয়ে এসব কথা জানান। 

গত রোববার রাতে নিজ বাসায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে অনেক ডাকাডাকি করলেও কাছে আসেননি স্ত্রী, ছেলে–মেয়ে ও জামাতারা। পরে প্রশাসনের সহায়তায় পরিবারের লোকজনের অনুপস্থিতিতে তার দাফন হয়।

মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম সাহাব উদ্দিন (৫৫)। তিনি জ্বর, কাশি, হাঁচি, শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তিনি উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, কিছুদিন আগে সাহাব উদ্দিনের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। একই সঙ্গে জ্বর ও কাশি ছিল। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়ে যান। গত শনিবার রাত থেকে হঠাৎ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে গতকাল সকালে তিনি নিজে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নমুনা দিয়ে আসেন। রাতে তার মৃত্যু হয়। পরে রাতেই তাকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী, তিন ছেলে, তিন মেয়ে ও তিন জামাতা রয়েছেন। দুই ছেলে কাজের সূত্রে গ্রামের বাইরে থাকেন। মৃত্যুর সময় বাকিরা সবাই বাড়িতে ছিলেন।

মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রবিউজ্জামান বলেন, সাহাব উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে একটি পেট্রলপাম্পে চাকরি করতেন। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গত বুধবার রাতে বাড়িতে আসেন। গত শনিবার রাত থেকে তাঁর শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও কাশি বেড়ে যায়। এর পরদিন সকালে তিনি হাসপাতালে গিয়ে কোভিড–১৯ আক্রান্ত কি না, তা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসেন। দুপুরে বাড়িতে আসলে পরিবারের লোকজন তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন এবং তাকে এক ঘরে বদ্ধ করে রাখেন।

ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, আশপাশের অন্য লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তিনি গ্রামপুলিশ নিয়ে ওই বাড়িতে ছুটে যান। দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পর পরিবারের একজন দরজা খুলে দিয়ে নিজ কক্ষে চলে যান। এরপর তিনি লাশ দাফন করার জন্য স্থানীয় মসজিদ থেকে খাটিয়া আনতে লোক পাঠালে মসজিদ কমিটির লোকজন খাটিয়া দিতে অস্বীকৃতি জানান ও কবর দিতে বাধা দেন। পরে তিনি স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় গভীর রাতে পরিবারের লোকজনের অনুপস্থিতিতে জানাজা শেষে লাশ দাফন সম্পন্ন করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান জানান, এ নিয়ে তার ইউনিয়নে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে এ ব্যাপারে সাহাব উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কেউ কথা বলতে চাননি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উৎপল দাস বলেন, গতকাল সকালে সাহাব উদ্দিন নিজেই হাসপাতালে এসে নমুনা দিয়ে যান। তিনি জানান, সোনাগাজী উপজেলায় এ পর্যন্ত দুই চিকিৎসকসহ ২১ জন কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত হয়েছেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়