সীমান্তের ৩ কিলোমিটার ভেতরে সাংবাদিক প্রবেশে মানা
সীমান্তের তিন কিলোমিটার ভেতরে সাংবাদিক ঢুকতে মানা। শুনতে অবাক হলেও এ ঘটনা ঘটেছে বেনাপোল সীমান্তে। বেনাপোল সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা সীমান্ত এলাকায় সাংবাদিক প্রবেশে অলিখিত কারফিউ জারি করেছে। বিষয়টি নিয়ে সুশীল সমাজের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য নিউজ বাংলাদেশের যশোর প্রতিনিধি তরিকুল ইসলাম মিঠু সোমবার দুপুরে পুটখালী সীমান্তে প্রবেশ করতে চাইলে মোটর সাইকেলে প্রেস লেখা দেখে তাকে তিন কিলোমিটার পূর্বে মসজিদবাড়ী বিজিবির চেকপোস্টে বিজিবি সদস্যরা থামিয়ে দেন। এ সময় বিজিবি সদস্যরা এ সংবাদকর্মীকে বলেন, “ সাংবাদিকরা এ বিজিবি চেকপোস্টের ওপাশে প্রবেশ করতে পারবে না।”
এক পর্যায়ে পুটখালী বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার জাকিরের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, “ব্যাটেলিয়ান অধিনায়কের নির্দেশ, কোনো সাংবাদিক পুটখালী সীমান্তে প্রবেশ করতে পারবে না। যদি পুটখালী সীমান্তে প্রবেশ করতে হয় তাহলে বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়কের পাস নিয়ে ঢুকতে হবে। এছাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতির অনুমতিপত্রও নিতে হবে।”
বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের পাস বা প্রেসক্লাবের সভাপতির পাস কেন লাগবে তা জানতে চাইলে পুটখালী বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার জাকির হোসেন নিউজ বাংলাদেশকে বলেন, “এটি ব্যাটেলিয়ান কর্মকর্তার নির্দেশ।”
তবে প্রেসক্লাবের সভাপতির অনুমতিপত্র কেন লাগবে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও সাংবাদিক নেতাদের সাথে এক বৈঠকের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।”
কোন প্রেসক্লাবের নেতাদের সাথে বৈঠক হয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। ‘বেনাপোল-শার্শায় মিলে নাম সর্বস্ব ১৩টা প্রেসক্লাব বা সিন্ডিকেট রয়েছে’ উল্লেখ করে কোন প্রেসক্লাব নেতা বা সিন্ডিকেট নেতার সাথে বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা আমি বলতে পারব না, বিষয়টি ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক বলতে পারবেন কখন কাদের সাথে বৈঠক হয়েছে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সীমান্তের একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রকৃত সাংবাদিকরা সীমান্তে প্রবেশ করলে বিজিবির গোমর ফাঁস হয়ে যাবে। তাই সীমান্তে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন। এর আগে পুটখালী সীমান্ত জুড়ে ব্যাপক অনৈতিক কাজ বাজ হতো। সাংবাদিকেদের বদৌলতে সেটা প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। তাই বিজিবি সদস্যদের সাংবাদিকদের উপর অলিখিত বিধি নিষেধ।
উল্লেখ্য, ঈদ সামনে রেখে সীমান্তগুলো দিয়ে চোরাচালানিরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং প্রতিটি ঈদের আগেই মূলধারার সংবাদকর্মীরা এগুলো নিয়ে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করে থাকেন। আর এসব চোরাচালানের সাথে এক শ্রেণীর অসাধু বিজিবি সদস্যরাও নিবিড়ভাবে জড়িত থাকার তথ্যও প্রকাশ পায় অধিকাংশ সময়। আর এসব অসাধু বিজিবি সদস্যদের স্থানীয় কিছু নামকাওয়াস্তে সাংবাদিক বিজিবির এ অনৈতিক কাজের সমর্থন করে থাকেন। সমর্থনের বিনিময় নামসর্বস্ব প্রেসক্লাবের নেতারা নিজের পকেট ভারি করে থাকেন। এছাড়া বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সরকার লকডাউন ঘোষণা করেন । ঐদিনের পর থেকে ভারতে আটকে থাকা পাসপোর্ট যাত্রীদের বেনাপোল ইমিগ্রেশন হয়ে আসা যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন থেকেই সীমান্তে চোরাই পথে সীমান্তের কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভারত থেকে অবাধে প্রবেশ করতে থাকে অনুপ্রবেশকারীরা। বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলাদেশ ফলাও করে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এর পরপরই বিজিবি সদস্যরা সীমান্তে নড়েচড়ে বসেন। এবং সীমান্ত জুড়ে কঠোর নজরদারিতে রাখেন।
বিষয়টি নিয়ে খুলনা বিজিবি ব্যাটেলিয়ানের অধিনায়ক মনজুরুল এলাহীর মুঠোফোনে বারবার সংযোগ দিলেও তিনি তার ফোনটি রিসিভ করেননি। পরে তার ফোনে বার্তা প্রেরণ করলে কিছু সময় পর ফোনটা রিসিভ করেন। এ সময় সাংবাদিক প্রবেশের বিধি নিষেধ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখন একটা মিটিং এ আছি। তাই বিষয়টি আপনাকে পরে জানাবো। আপনাকে জানানোর পরে অন্য একদিন আপনি সীমান্তে ভিজিট করে আসবেন এ কথা বলে তিনি ফোনটার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ