চার মাসে বজ্রপাতে নিহত ৭৯, সবচেয়ে বেশি সিলেটে
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সারাদেশে বজ্রপাতে ৭৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে এপ্রিল মাসে। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তারা বেশিরভাগই কৃষিকাজে ছিলেন। তবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে সিলেট বিভাগে।
বৃহস্পতিবার সকালে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরে সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড কাস্টম আওয়ারনেস ফোরাম।
বজ্রপাতের কারণ হিসেবে এই সংগঠনটি জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তন, লম্বা গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, আকাশে কালো মেঘের পরিমাণ ও মেঘে মেঘে ঘর্ষণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই অস্বাভাবিক হারে বজ্রপাত বেড়েছে।
সংগঠনের সেক্রেটারি নির্বাহী প্রধান মোল্লা আব্দুল আলীম সংবাদ সম্মেলনে জানান, বছরের প্রথম চার মাসে বজ্রাঘাতে আহত হয়েছেন আরও ২১ জন। তার মধ্যে ১৫ জন পুরুষ এবং ছয় জন নারী রয়েছেন। নারী ও পুরুষের মধ্যে দুই জন কিশোর।
তিনি বলেন, সাধারণত জানুয়ারি মাসে প্রচণ্ড শীত থাকায় বজ্রপাত হয় না। তবে এবার কনকনে শীতের মধ্যেও ওই মাসে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে তিন জন। তারা তিন জনই পুরুষ। ফেব্রুয়ারি মাসে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও মার্চ মাসে ছয় জন এবং এপ্রিল মাসে ৭০ জনের প্রাণহানি ঘটে।
অন্যদিকে মার্চ মাসে দুই জন নারী এবং চার জন পুরুষের মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে মার্চ মাসে আহত হয়েছেন ছয় জন। এর মধ্যে দুজন পুরুষ এবং চার জন নারী।
এপ্রিল মাসে মোট নিহত হয়েছেন ৭০ জন। এর মধ্যে নারী আট জন এবং ৬২ জনই পুরুষ। নারী ও পুরুষের মধ্যে শিশু তিন জন, কিশোর সাত জন এবং কিশোরী দুই জন। এছাড়া এপ্রিল মাসে বজ্রাঘাতে মোট ১৫ জন আহত হয়েছেন। তার মধ্যে ১৩ জন পুরুষ এবং দুই জন নারী।
সংগঠনটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, সবচেয়ে বেশি ৪০ জন নিহত হয়েছে কৃষি কাজ করার সময়। নৌকায় বসে মাছ ধরার সময় দুই জন। মাঠ থেকে গরু আনার সময় নিহত হয়েছে ১২ জন। আম কুড়ানোর সময় এক জন। ঘরে অবস্থানকালীন চার জন। পাথর উত্তোলনের সময় দুই জন। মাঠে খেলা করার সময় এক জন। বাড়ির আঙিনায় খেলা করার সময় দুই জন। ফাকা রাস্তায় চলার সময় চার জন। রিকশা চালানোর সময় এক জন। গাড়িতে থাকাকালীন দুজন। অন্যদিকে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার সময়, নির্মাণ কাজ করার সময় ও হাওরে অবস্থানকালসহ বিভিন্ন সময় বজ্রপাতে নিহত হয়েছে ছয় জন।
বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ টেলিভিশনের স্ক্রল থেকে তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানায় সংগঠনটি।
তাদের বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে শরীয়তপুরে তিন জন, কিশোরগঞ্জে দুজন, মুন্সিগঞ্জে দুজন, রাজবাড়ীতে এক জন, মাদারীপুরে তিন জন, ফরিদপুরে তিন জন, কুমিল্লায় এক জন, কক্সবাজার পাঁচ জন, খাগড়াছড়িতে এক জন, নোয়াখালীতে তিন জন, চাদপুরে একজন, লক্ষীপুরে চার জন, সিরাজগঞ্জে এক জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক জন, নাটরে একজন, নওগাঁওয়ে এক জন, খুলনায় এক জন, যশোরে দুজন, নড়াইলে এক জন, চুয়াডাঙ্গায় এক জন, মাগুরায় এক জন, ঝিনাইদহে এক জন, পটুয়াখালীতে সাত জন, পিরোজপুরে দুজন, ভোলায় এক জন, বরগুনায় একজন, সিলেটে সাত জন, হবিগঞ্জে দুজন, সুনামগঞ্জে চার জন, দিনাজপুরে এক জন, গাইবান্ধায় পাঁচ জন, ময়মনসিংহে তিন জন, শেরপুরে একজন, জামালপুরে একজন, ও নেত্রকোণায় চার জন নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে বিভাগ ওয়ারি বিশ্লেষণ করলে সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া ঢাকা বিভাগে ১৪ জন, বরিশাল বিভাগে ১১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪ জন, রাজশাহী বিভাগে চার জন, খুলনায় সাত জন, সিলেটে ১৩ জন, রংপুর ছয় জন ও ময়মনসিংহে ৯ জন।
এর আগে ২০১৯ সালে সারাদেশে বজ্রপাতে নিহত হন ২৪৬ জন। এর মধ্যে ৩০ জন নারী, ছয় জন শিশু, আট জন কিশোর-কিশোরী ও ২০২ জনই পুরুষ।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ