News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২ মে ২০২০
আপডেট: ০৪:২৫, ৫ মে ২০২০

করোনা: নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির করুণ দশা

করোনা: নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির করুণ দশা

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বিশ্বমহামারী কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি ভয়াবহ। তার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে নিউইয়র্কে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মুখে নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশিদের করুণ দশা নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ২০১০ সালের আদমশুমারি অনুসারে নিউইয়র্কে দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল জনগোষ্ঠী বাংলাদেশি। নিউইয়র্কের কুইনস, ব্রংস এবং ব্রুকলিন বাংলাদেশি কমিউনিটি অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। নিউইয়র্কের ওই তিনটি অঞ্চলেই করোনা সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। শনিবার পর্যন্ত নিউইয়র্কে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছেন ১৯০ জন।
তবে কমিউনিটি নেতাদের মাধ্যমে প্রাপ্ত এই মৃতের সংখ্যা এবং বাংলাদেশিদের মধ্যে আক্রান্তের প্রকৃতপক্ষে আরও বেশি বলে ধারণা করছেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক নাদিয়া ইসলাম। তিনি আলজাজিরাকে বলেন, মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) শুধুমাত্র এশিয়ানদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে এবং একটা বড় অংশ চিকিৎসা নেওয়ার আগেই মারা গেছেন। তাই বাংলাদেশিদের মধ্যে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
অবশ্য তার এই ধারণার পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি পুরুষদের অধিকাংশই ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক শ্রমসাধ্য কাজের সঙ্গেও যারা জড়িত আছেন তাদের কাজের পরিবেশ ঝুকিপূর্ণ। দীর্ঘসময় কাজ করার কারণে তাদের শারীরিক সমস্যাও প্রচুর। বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা এবং পুষ্টিহীনতায় ভোগার কারণে কোভিড-১৯ সংক্রমণের জন্য বাংলাদেশিরা ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর তালিকায় রয়েছে।
এ ব্যাপারে একজন বাংলাদেশি ট্যাক্সি চালক মামুন হক আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, তাদের অ্যাপার্টমেন্টে শেয়ার করে থাকতে হয়। তাই শারীরিক দূরত্বও কঠোরভাবে মেনে চলা সম্ভব হয় না।
অন্যদিকে, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার সূচকে তলানিতে পড়ে থাকা বাংলাদেশি কমিউনিটি লকডাউন নিয়ে পড়েছেন উভয় সংকটে। একে তো আক্রান্ত হওয়ার ভয় তার ওপর আবার যুক্ত হয়েছে খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ক্ষমতা হারানোর ভয়। বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়ায় তারা সরকারি প্রণোদনা চেয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু, সেখানেও দীর্ঘসূত্রিতা তাদের নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছে।
আর্থিক প্রণোদনার জন্য আবেদন করা বাংলাদেশি ট্যাক্সি চালক ওসমান চৌধুরি তার ভোগান্তির কথা আল জাজিরাকে জানিয়ে বলেছেন, সিস্টেমের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে প্রণোদনার চেক দেওয়ার কথা বলে দিনের পর দিন তাকে ঘুরিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কয়েকদফা সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষে তাকে বিশ্বমহামারী বেকার সহায়তার জন্য আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ওসমান চৌধুরি বলেন, তার আটজন বন্ধু ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আরও অন্তত ১০ জন চিকিৎসাধীন আছেন। সামনে কি অনিশ্চিত ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
তার ওপর রমজান শুরু হয়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে আরও চাপের মুখে পড়েছেন মুসলিম অধ্যুষিত নিউইয়র্কের বাংলাদেশিরা। ব্যাপক খ্যাদাভাব তৈরি হয়েছে। কিন্তু অন্যরকম সামাজিক-সাংস্কৃতিক বোঝাপড়ার কারণে তারা ব্যক্তি বিশেষের কাছে হাতও পাততে পারছেন না। অনেকেই সংগঠন ভিত্তিক সহযোগিতা নিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে মসজিদ বা কমিউনিটি ফুড ব্যাংক জোরাল ভূমিকা রাখছে।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে জোর দাবি উঠেছে লকডাউন প্রত্যাহারের। নিউইইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটি তাতেও কোনো আশার আলো দেখছেন না। লকডাউন খুললেই কাজ বা যাত্রী খুঁজতে বের হতে হবে। কিন্তু, বিশ্বমহামারীর মধ্যে কে দেবে তাদের কাজ? কে বা উঠবেন তাদের ট্যাক্সিতে– তাই ভেবে আতংকে দিন কাটাচ্ছেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়