ঘূর্ণিঝড় আর তীব্র তাপপ্রবাহের সংকেত দিচ্ছে বৈশাখ
গ্রীষ্ম দিয়েই ঋতুচক্রের হালখাতা খোলে বাংলা পঞ্জিকা। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাস মিলিয়ে এই কালের আরম্ভ। এই ঋতুর শুরুতেই ঈশান কোণে কালো মেঘের জটলা পাকিয়ে শুরু হয় ঝড়। কালবৈশাখির ওই ঝড়ের সাথে নামে তুমুল বর্ষণও। ঝড়-বৃষ্টি থেমে গেলে শুরু হয় তাপপ্রবাহ।
আবহাওয়া অধিদফতরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে এপ্রিল ও মে মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র এবং দেশের অন্যত্র দু-একটি মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ আসার কথা বলা হয়েছে। আছে ঝড়ের পূর্বাভাসও। এ বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসের গতকাল পর্যন্ত দেশে গড় বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের তুলনায় কম। তবে মে শুরুতে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে।
২০১৫ সাল থেকে গ্রীষ্ম ঋতুতে দেশে অস্বাভাবিক বেশি বৃষ্টিপাত, কালবৈশাখী ও অত্যধিক সংখ্যায় বজ্রপাতের প্রবণতা শুরু হয়। যেখানে ১৯৮১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৩০ বছর গ্রীষ্ম ঋতুতে গড় বৃষ্টিপাত ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু কম। পাঁচ বছর পর কম বৃষ্টিপাতের সেই ধারা আবার ফিরে এসেছে।
বৃষ্টিহীন বৈশাখী দিনে তাপমাত্রা বেড়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি উঠতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, মে মাসেই এমন অবস্থার মুখোমুখি হবেন দেশবাসী।
আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস বলছে, মে মাসের শুরুতে সমুদ্রে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। গত বছরের মে মাসের ৩ তারিখে ঘূর্ণিঝড় ফণী দেশের উপকূলে আছড়ে পড়ে। এ বছরও একই রকম একটি ঘূর্ণিঝড়ের আশংকা করছেন আবহাওয়াবিদরা। এছাড়া জুন মাসে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করলে বর্ষাকালের হাত ধরে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, “মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়ে একটি রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। তবে এ মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা) এবং অন্যত্র ১ থেকে ২টি মাঝারি (৩৮ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা) এবং ১ থেকে ২টি মৃদু তাপপ্রবাহ (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা) বয়ে যাবে।”
এ মাসে তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠানামা করবে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
এদিকে গত দুইদিন ধরে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কালবৈশাখি ঝড় হচ্ছে। সোমবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়-বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় বিজলী চমকানো এবং অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও শিলা বৃষ্টিও হতে পারে।
পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার (৩ দিন) পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, মংলা, খুলনা, যশোর, চট্টগ্রাম ও বরিশাল অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এসব এলাকার নদী বন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
তাপপ্রবাহের বিষয়ে আবহাওয়া অফিস বলছে, রাঙ্গামাটি, রাজশাহী ও যশোর অঞ্চল সমূহের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপটি দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। বৈশাখের দ্বিতীয় দিন থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝড়ো বাতাসসহ বৃষ্টি হয়েছে। আরও দু’দিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড়ো বাতাসসহ বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা থাকতে পারে। এতে কয়েকদিন তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকবে।
আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কালবৈশাখি ঝড় হয়েছে। হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিও হয়েছে। এজন্য ২২ এপ্রিল পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ