ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনা ঝুঁকি উপেক্ষা করে জানাজায় মানুষের ঢল
করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শনিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে জামিয়া রহমানিয়া বেড়তলা মাদ্রাসায় খেলাফত মজলিসের এক নেতার জানাজায় অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এই আয়োজন ঠেকাতে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
জুবায়ের আহমদ আনসারীর প্রতিষ্ঠিত সরাইলের জামিয়া রহমানিয়া বেড়তলা মাদ্রাসায় শনিবার সকাল ১০টা থেকে এই জানাজা হয়।
সে সময় মানুষের ভিড় মাদ্রাসার সীমানা ছাড়িয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গিয়ে পৌঁছালেও পুলিশ ছিল নীরব ভূমিকায়।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সরাইল থানার ওসি মো. শাহাদাৎ হোসেন টিটু বলেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছাড়াও ঢাকা থেকে লোকজন এসেছে। আমরা চিন্তাও করতে পারিনি যে এত লোক হবে। লোকজন আসতে শুরু করার পর আমাদের আর কিছু করার ছিল না।”
বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পরস্পর থেকে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্য অনেক দেশের মত বাংলাদেশ সরকারও প্রায় সবকিছু বন্ধ করে সবাইকে ঘরে থাকতে বলেছে।
সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকে অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে আগেই। অর্থাৎ, এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় যেতে পারার কথা না।
জনসমাগম এড়াতে যেখানে সরকারের তরফ থেকে মসজিদেও জামাতে নামাজ না পড়তে বলা হচ্ছে তারপরও কীভাবে সরাইলে এত মানুষের সমাগম হল সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মো. মুসা বলেন, “তারা উপজেলা প্রশাসন থেকে কোনো অনুমতি নেননি। আমরা যখন জানতে পেরেছি তখন পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। সেখানে পুলিশ ছিল। কিন্তু পুলিশ কিছু করতে পারেনি।”
আর জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান সাংবাদিকদের বলেন, “বর্তমানে লকডাউন চলছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। গতকাল তাদের আমরা জানিয়ে দিয়েছি এবং তারা আমাদের বলেছিলেন, সীমিত পরিসরে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন। এখন প্রকৃত বিষয়টি কী তা খতিয়ে দেখতে হবে।”
খেলাফত মজলিশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারী শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মার্কাস পাড়ায় নিজের বাসায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর।
জুবায়ের আহমদ আনসারীর বাড়ি জেলার নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের আলিয়ারা গ্রামে। ওই এলাকা থেকে ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে হেরেছিলেন তিনি।
তার মৃত্যুর খবরে শনিবার সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আলেম ও মাদ্রাসা ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ সরাইলের ওই মাদ্রাসায় ভিড় করতে শুরু করে।
জানাজায় ইমামতি করেন আনসারীর ছেলে আসাদ উল্লাহ। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের আমির ইসমাইল নূরপুরী, মহাসচিব মাহফুজুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া খেলাফত মজলিশের সভাপতি আবদুল আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মাঈনুল ইসলাম জানাজায় অংশ নেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি