যে কারণে আটকে গেল র্যাবের গোয়েন্দা সরঞ্জাম কেনা
ঢাকা: বাকি ছিল শুধু জাহাজীকরণ, ঠিক এমন সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের গোয়েন্দা সরঞ্জাম কেনার কার্যক্রম আটকে দিয়েছে সুইজারল্যান্ড।
গোয়েন্দা সরঞ্জামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা এবং নজরদারি করার মতো অত্যাধুনিক সরঞ্জাম। যার সাহায্যে খুব সহজেই যে কারো কথোপকথন এবং তার বর্তমান অবস্থা জানতে পারতো র্যাব।
যদিও, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে টেলিফোনে আড়ি পাতা বৈধ। টেলিযোগাযোগ আইনের ৯৭(ক) ধারায় বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যবহারকারীর পাঠানো বার্তা ও কথোপকথন প্রতিহত, ধারণ বা এ-সম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহে সরকার সময় সময় নির্ধারিত সময়ের জন্য গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা বা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাকে কোনো ক্ষমতা দিতে পারবে।”
এ বিষয়ে জানতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক মাকসুদুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাদেশ.কমকে বলেন, “গোয়েন্দা সরঞ্জাম কেনার শেষ পর্যায়ে একটি মানবাধিকার সংগঠনের আবেদনের প্রেক্ষিতে চালানটি আটকে দিয়েছে সুজারল্যান্ড। বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক চলছে। আশাকরি খুব শীঘ্রেই সুইজারল্যান্ড চালানটি ছেড়ে দেবে।”
দরপত্র অনুসারে, নজরদারির জন্য যে প্রযুক্তি বা সরঞ্জাম র্যাব কিনছে সেটা ‘ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল সাবস্ক্রাইবার আইডেনটিটি (আইএমএসআই) ক্যাচার নামে পরিচিত। এগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী গোয়েন্দা সরঞ্জাম। এর মাধ্যমে মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা হয়। এই প্রযুক্তি উপকরণ সহজে বহনযোগ্য এবং গাড়িতে ব্যবহারের উপযোগী।
এর আগে র্যাবের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি চিঠি হয়। চিঠিতে র্যাবের ব্যবহার করা গোয়েন্দা সরঞ্জাম ইউএইচএফ ট্রান্সমিটার অ্যান্ড সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্টটি ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর অকেজো ঘোষণা করা হয়। সরকারি অনুমোদনের পর আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে নতুন আরেকটি যন্ত্র ক্রয়-প্রক্রিয়া শুরু হয়। একইভাবে এটি ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রাকহাজীকরণের বিষয়টিও অনুমোদন করা হয়।
সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া মেনে কেনাকাটা সম্পন্ন করার একপর্যায়ে র্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে একটি মানবাধিকার সংস্থা সংবাদ প্রচার করে। সেই সংবাদের ওপর ভিত্তি করে উৎপাদনকারী দেশ সুইজারল্যান্ড জাহাজীকরণ প্রক্রিয়া আটকে দেয়। এসব সরঞ্জাম না থাকায় গোয়েন্দা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলেও সে চিঠিতে উল্লেখ করে র্যাব।
উল্লেখ্য, সরকারি ক্রয়ের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ওয়েবসাইটে গত বছরের ৬ জানুয়ারি নতুন করে ‘ইউএইচএফ ট্রান্সমিটার অ্যান্ড সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট’ আইএমএসআই ক্যাচার কেনার দরপত্র আহ্বান করে র্যাব। দরপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ১২ ফেব্রুয়ারি। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। যাচাই-বাছাই শেষে জার্মানির ইউরোপাল অ্যাগ্রি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ আদেশ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় প্রতিনিধি এমএম ট্রেডার্স। তারা সুইজারল্যান্ডের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নিওসফট থেকে নেওয়া গোয়েন্দা সরঞ্জাম র্যাবের কাছে সরবরাহ করবে বলে জানা গেছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনএইচ/
নিউজবাংলাদেশ.কম