ভারতীয় মাদকের হাট মিরসরাই
মিরসরাই (চট্টগ্রাম): সীমান্ত পেরিয়ে ভারত থেকে আসা মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই। হাত বাড়ালেই মিলছে যে কোনো ধরনের মাদকদ্রব্য। ফলে মাদকের হাটে পরিণত হয়েছে মিরসরাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মাঝে মধ্যে মাদকদ্রব্যসহ ব্যবসায়ী আটক হওয়া সত্ত্বেও থামছে না মাদকের চোরাচালান। প্রশাসনকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
মিরসরাইয়ে মাদকের সিংহভাগ চালান আসছে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। মাদক সরবরাহে কাজ করছে হাজার হাজার বেকার যুবক। জড়িয়ে পড়ছে নারীও। এসব মাদক প্রথমে সুযোগ বুঝে সীমান্ত সংলগ্ন বাড়িতে জড়ো করা হয়। এরপর চোরাচালন সিন্ডিকেটের সদস্যরা তা ছড়িয়ে দেয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ফেনসিডিল, মদ, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ও গাঁজার চাহিদা বাড়ার কারণে চোরাচালানের সাথে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভারতের ত্রিপুরা, আখাউড়া এলাকা থেকে কোটি কোটি টাকার মাদক এনে সুবিশাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে মিরসরাইসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত উপজেলার ১ নম্বর করের হাট ইউনিয়নের ওলিনগর গ্রাম, পার্শ্ববর্তী উপজেলার ছাগলাইনাইয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে অবাধে আসছে এসব মাদকের চালান।
সম্প্রতি জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ রাখেশ (৩৫) নামের এক ভারতীয় নাগরিকসহ মাদকের বিশাল চালান আটক করলে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
প্রতিনিয়ত থানা পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি’র বিভিন্ন অভিযানে ধরা পড়েছে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। আটকও হয়েছেন অনেক মাদক ব্যবসায়ী। আটক হওয়া অধিকাংশ আসামী আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে পুনরায় জড়িয়ে পড়ছেন মাদক ব্যবসায়। পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও এখন জড়িয়ে পড়ছেন এ ব্যবসায়। সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা এসব মাদক ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চলমান হরতাল-অবরোধের মধ্যে মহাসড়কে নাশকতা এড়াতেই পুলিশকে তৎপর থাকতে হয় বলে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাদকের রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। মাদক পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হয় উপজেলার অলিনগর সীমান্ত, ঠাকুরদিঘীর মহামায়া প্রকল্প, মিরসরাই-নারায়ানহাট-ফটিকছড়ি সড়ক, উপজেলার আদিবাসী পাড়া, করেরহাট-রামগড়-ছাগলনাইয়া-ফটিকছড়ি সড়ক, সাহেরখালী বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় এলাকাকে।অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। আর যারা মাসোহারা দেয় না আইওয়াশ হিসেবে মাঝে মধ্যে তাদেরকেই ধরা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার করেরহাট, অলিনগর, হিঙ্গুলী, জামালপুর, মেহেদীনগর, বারইয়ারহাট বাঁশ বাজার, গাছ বাজার, শান্তিরহাট, চিনকী আস্তানা ষ্টেশন, জোরারগঞ্জ, আবুরহাট, সোনাপাহাড়, ঠাকুরদিঘী, দুর্গাপুর বাজার, মিঠাছরা নামার বাজার, মিরসরাই পৌরবাজার, বড়তাকিয়া, আবুতোরাব, হাদিফকিরহাট, নিজামপুর কলেজ সহ বিভিন্ন ছোট বাজারগুলোতে চলে মাদকের জমজমাট বিকিকিনি।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ এমকে ভূইয়া নিউজবাংলাদেশকে বলেন, উপজেলাতে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী ধরার জন্য প্রতি সপ্তাহে অভিযান চলে। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে চালান দেওয়ার পর তারা আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে পুনরায় মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন।
জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের পুনর্বাসন করা গেলে মাদকের হাত থেকে তরুণ সমাজকে বাঁচানো সম্ভব। মাদকের ব্যাপারে প্রশাসন সব সময় জিরো টলারেন্স।
নিউজবাংলাদেশ.কম/আইআর/এফই
নিউজবাংলাদেশ.কম