হেলাল ও আনোয়ারের পরিবারের দায়িত্ব নেবেন মন্ত্রী
ঢাকা: লিবিয়ায় আইএসের হাতে অপহৃত ২ বাংলাদেশি হেলাল ও আনোয়ারের পরিবারের দায়িত্ব নেবেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
মঙ্গলবার নিউজবাংলাদেশের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা জানান। আইএসের হাতে অপহৃত দুই বাংলাদেশি হলেন- জামালপুরের হেলাল এবং নোয়াখালীর আনোয়ার।
আলাপকালে মোশাররফ হোসেন বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অপহৃতদের উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর বাইরেও দেশে অসহায় দু’টি পরিবারের পাশে আমি ব্যক্তিগতভাবে দাঁড়াতে চাই। ইতিমধ্যে আমার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।”
মন্ত্রী বলেন, “সম্প্রতি ইরাকে আটকা পড়া ৬৭ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর থেকেই লিবিয়াতে অবস্থানরত সব বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছিলো।” এখনো যেসব বাংলাদেশি লিবিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করছেন তাদের সাবধানতা অবলম্বন করারও পরামর্শ দেন মোশাররফ হোসেন।
এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃঅনুবিভাগ সূত্র জানায়, আইএসের হাতে ২ বাংলাদেশি অপহৃত হওয়ার পর ওই এলাকায় কর্মরত আরো ২১ বাংলাদেশিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সিরতে শহরের আলগানি তেলখনি থেকে ইসলামি জঙ্গি সংগঠন (আইএস) কর্তৃক অপহৃত বাংলাদেশি আনোয়ার হোসেনের বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের গয়েছপুর গ্রামে। আর হেলাল উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ গজারিয়ায় গ্রামে।
আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মারুফা খাতুন জানান, ২০১০ সালে আনোয়ার হোসেন চাকরি নিয়ে লিবিয়ায় যান। এরপর ২০১১ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে দেশে আসেন তিনি। ৩৬ দিন দেশে থাকার পর ২০১২ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি পুনরায় লিবিয়ায় যান। বুধবার টেলিভিশনের সংবাদ মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন তার স্বামী আইএসের হাতে অপহৃত হয়েছেন। সেসময় তিনি টেলিফোনে তার স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরবর্তীকালে তিনি তার স্বামীর বন্ধু লিবিয়ায় অবস্থানরত কুষ্টিয়ার মইনুল হোসেনের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। এসময় তাকে জানানো হয়, আনোয়ার হোসেন লিবিয়ায় যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন তারা আইএস জঙ্গিদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারে আনোয়ার ভাল আছেন এবং সুস্থ আছেন। এ তথ্য মইনুল হোসেন আলগানি কোম্পানির মাধ্যমে জানতে পেরেছেন।
আনোয়ার হোসেনের রাহীন (৭) ও রাইশা (৫) নামের দুই সন্তান রয়েছে। আনোয়ার হোসেনের পরিবার তাকে আইএস জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে বাংলাদেশি শ্রমিক হেলাল উদ্দিনের গ্রামের বাড়িতে চলছে কান্না আর আহাজারি। হেলাল উদ্দীন ৬ বছর আগে লিবিয়া যান। আটমাস আগে তিনি দুই মাসের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। আর ছুটি কাটিয়ে ছয়মাস আগে তিনি লিবিয়া যান। গ্রামের বাড়িতে তার স্ত্রী দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে।
অপহৃত হেলালের বড় ভাই ফকির মাহমুদ জানান, হেলালের বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তিন সন্তান লেখাপড়া করছে। হেলালের স্ত্রী আলেয়া জানান, তার অপহরণের খবর শুনে বাড়িতে রোজ কেয়ামত নেমে এসেছে। আমার সন্তানরা অপহরনের খবর পেয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছে। তারা বলছে বাবা ফিরে না এলে আমাদের কী হবে। তিনিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বামীকে উদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান।
অপহৃত বাংলাদেশিদের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ বিষয়ে ত্রিপোলি দূতাবাসের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ দূতাবাস। তবে আইএস ওই বাংলাদেশিকে ঠিক কোথায় নিয়ে গেছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে দূতাবাস। এজন্য লিবিয়ার জাতীয় তেল কোম্পানি (এনওসি) ও তেল ক্ষেত্রটির তত্ত্বাবধায়ক কোম্পানি ভাওসের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে দূতাবাস।
নিউজবাংলাদেশ.কম/আরআর/এমএম
নিউজবাংলাদেশ.কম