আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ
নারীর ক্ষমতায়নেই মানবজাতির ক্ষমতায়ন
ঢাকা: আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর অধিকার আদায়ের দিন আজ। জাতিসংঘ ঘোষিত ২০১৫ সালে এই দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘নারীর ক্ষমতায়নেই মানবজাতির ক্ষমতায়ন’। এ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে নিয়ে সারা বিশ্বের মতো রবিবার বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
১৮৫৭ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে একটি সেলাই কারখানায় নারী শ্রমিকরা ভোটাধিকার, শ্রমঘণ্টা দৈনিক ৮ ঘণ্টা, ন্যায্য মজুরিসহ বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দাবিতে আন্দোলন করে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়। এখনও প্রতিদিন বিশ্বের কোথাও না কোথাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে নারী। এই নির্যাতনকে প্রতিহত করে অধিকার আদায়ের প্রতীকী ব্যঞ্জনা নিয়েই প্রতি বছর পালিত হয় নারী দিবস।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর নারীর ক্ষমতায়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের নারীরা আজ শুধু গার্মেন্ট শিল্পেই নন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যবসা, উদ্যোক্তা, সাংবাদিকতা, এভারেস্ট জয়, খেলা, সৃষ্টিশীল এমনকি যুদ্ধ বিমান চালনাতেও একে একে নিজেদের দক্ষতা, যোগ্যতা আর গ্রহণযোগতার প্রমাণ রেখে চলেছেন। সদ্য বাংলাদেশ সফরে আসা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, মানবসূচক উন্নয়নে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের নারীরা অনেক এগিয়ে গেছে। এটি জাতীয় অর্থনীতিতে এক ধরনের ইতিবাচক প্রভাব আনবে। তাছাড়া দেশের শীর্ষ কর্মপদে বাংলাদেশ নারীদের ক্ষমতায়নে অনেক দূর এগিয়েছে। এটিরও একটি শুভ প্রভাব অনিবার্য। আমর্ত্য সেনের কথার রেশ ধরে বাংলাদেশের নারীদের এমন অগ্রযাত্রার উদাহরণ বিশ্ব সমাজকে চমকে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
প্রথম নারী শ্রমিক ইউনিয়নও গঠিত হয় ১৮৬০ সালের এই দিনে। পরে ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্প কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার অধিকার।
১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ই মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব করেছিলেন। পরে ১৯৭৭ সাল থেকে ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। এরপর থেকেই সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করে আসছে। একইসঙ্গে এ দিন অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয় নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সমঅধিকার এবং তাদের মর্যাদার বিষয়ে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি উদযাপন করছে। রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নারীর ক্ষমতায়ন-মানবতার উন্নয়ন’। প্রতি বছর এমন নানা প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হয় দিনটি।
নারী আন্দোলনের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় নারী সমাজের যথেষ্ট অগ্রগতি হলেও এখনও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি জেন্ডার সমতার বিষয়টি। তবে এ চিত্র কেবল বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয়, এটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেরই চিত্র।
এরপরও আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের বাইরে থাকা প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী- ৪ জনই নারী। নারী সমাজের উন্নয়নে এর চেয়ে বড় ইতিবাচক আর কী হতে পারে? এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, বিচারপতি, পাইলট, ডাক্তার, ট্রেনচালক হিসেবে নিজেদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে নারীরা।
বাংলাদেশে ১৯৯১ সাল প্রথমবার এ দিবস পালন করা হয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৫’এর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
এদিকে দিনটিকে কেন্দ্র করে ৬৪টি মানবাধিকার ও নারী সংগঠনের মোর্চা সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি নারী দিবস উপলক্ষে বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
এছাড়া মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদফতরের তত্বাবধানে জেলা ও থানা পর্যায়ে পালিত হবে বিভিন্ন কর্মসূচি। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) নারী দিবস উপলক্ষে নারী সদস্যদের লেখা নিয়ে সংকলন “কণ্ঠস্বর” প্রকাশ করেছে।
এছাড়াও দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন নারী দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফই
নিউজবাংলাদেশ.কম