বোমা হামলায় কৌশলী পরিকল্পনাকারীরা
ঢাকা: আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও হরতাল-অবরোধে মাঠ পর্যায়ের বোমাবাজদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে হামলার নির্দেশদাতারা। যোগাযোগের ক্ষেত্রে নাম ও ফোন নম্বরের বদলে কিছুটা কৌশলী হয়ে নির্দিষ্ট ‘কোডওয়ার্ড’ ব্যবহার করছে তারা। ফলে ক্রমশই বেড়ে চলেছে গুপ্তহামলার ঘটনা। এর শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
রাজধানীর পান্থপথে গ্যাষ্ট্রোলিভার হাসপাতালের সামনে থেকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী র্যাব এক ভাড়াটে বোমাবাজকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। আব্দুল কাদির নামে ওই বোমাবাজ ৫ শ’ টাকা চুক্তিতে বোমা হামলা চালাতো। পেশায় তিনি সিএনজি চালক। কিছু দিন আগে নূর ইসলাম নামের এক ব্যাক্তির সাথে তার পরিচয় হয়। সে সময় থেকেই নূর ইসলাম নানাভাবে কাদিরকে বোমা হামালার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে থাকে বলে জানায় কাদির।
এদিকে চলমান হরতাল-অবরোধে অগ্নি সংযোগের ভয়ে কাদিরের মহাজন সিএনজি অটোরিকশা রাস্তায় না নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কাজ না থাকায় কাদির যায় নূর ইসলামের সাথে দেখা করতে। এসময় নূর ইসলাম পান্থপথে বেশ কিছু ককটেল হামলার নির্দেশ দেয় কাদিরকে। বিনিময়ে কাদিরকে ৫ হাজার টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২৬ ফেব্রুয়ারী কাদির হাজির হন পান্থপথের গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের সামনে। কিন্তু বোমা হামলা চালানোর পূর্ব মুহূর্তেই র্যাবের একটি চৌকস দলের হাতে ধরা পড়েন কাদির।
কাদির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে জানায়, নূর ইসলাম সব সময় তার সাথে বিভিন্ন ‘কোডওয়ার্ড’ বা সংকেতিক নম্বরের মাধ্যমে যোগযোগ করত। এমনকি মনির হোসেন নামের একান্ত বিশ্বস্ত এক ব্যক্তির সাথেও কোডওয়ার্ডের মাধ্যমে যোগযোগ করতেন নূর ইসলাম।
কাদির দাবি করেন, ঘটনার দিন নূর ইসলাম তার খুব কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন এবং মনির। কিন্তু তারা কেউই সরাসরি নাম বলছিলেন না। সবাই কিওয়ার্ডের মাধ্যমে কথা বলছিলেন।
পরে কাদিরের দেয়া তথ্যানুযায়ী র্যাব রাজধানীর কলাবাগান ও উত্তরা থেকে নূর ইসলাম এবং মনির হোসেনকে আটক করে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ১৮টি তাজা ককটেলও উদ্ধার করে র্যাব।
এ প্রসঙ্গে র্যাবের সহকারী পরিচালক(মিডিয়া) রুম্মন মাহমুদ নিউজবাংলাদেশকে বলেন, যে কোনো বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য একাধিক চক্র কাজ করছে। এরা ককটেল, পেট্রোলবোমসহ বিভিন্ন ধরনের বোমা হামলাও চালিয়ে থাকে। হামলাকারী ও নির্দেশদাতারা পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে নাম ও মোবাইল নম্বরের পরিবর্তে ‘কোডওয়ার্ড’ ব্যবহার করে থাকে।
তবে এ ধরনের কর্মকাণ্ড নস্যাৎ করতে র্যাবের ব্যাটালিয়নগুলো প্রত্যেকের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং আভিযানিক কর্মকাণ্ড আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও জানান রুম্মন মাহমুদ।
প্রসঙ্গত, চলমান হরতাল অবরোধে রাজধানীতে আগুন পুড়েছে শতাধিক গাড়ি। ককটেল হামলা হয়েছে বিদ্যালয় থেকে শুরু করে আদালত চত্বরেও। এমনকি গতকাল সোমবার সকালেও রাজধানীতে অন্তত ৪টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনএইচ/এফই
নিউজবাংলাদেশ.কম