News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:২১, ২৭ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ২২:৪৮, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ভদ্রা নদীর ভাঙনে গৃহহীন ৫০ জেলে পরিবার

ভদ্রা নদীর ভাঙনে গৃহহীন ৫০ জেলে পরিবার

খুলনা: খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতিয়া গ্রামের জেলে পাড়ার বাসিন্দা নীলপদ দাশ (৬৫) আক্ষেপ করে বলেন, “মাত্র ১০ বছর আগেও নিজের ঘরে থাকতাম। সেটি স্রোতের টানে নদীর মধ্যে চলে গেছে। শুধু থাকার ঘরটি নয়, গোয়াল ঘর, রান্না ঘর কোনোটাই আর নেই। বসত বাড়ি হারিয়ে এখন ওয়াপদার রাস্তায় ঘর বেঁধে বাস করছি।”
 
বয়সের ভারে ন্যুব্জ নীলপদ দাশ বলেন, “ভদ্রা নদীর পাড়ে আমার বাড়ি হওয়ায় এই নদীর ভাঙা-গড়া দেখেছি খুব কাছ থেকে। ওয়াপদার বেড়ি হলো। বেড়ির এপারে আমার বাড়ি। বেড়ির অনেক দূরেই ছিল নদী। বছর দশেক আগে এই নদীতে ভাঙন শুরু হয়। ধীরে ধীরে  বসত ভিটা নিয়ে যায়। একেক করে আমার ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে যায়। এখন ঠাঁই হয়েছে রাস্তার পাশে।”
 
শুধুমাত্র নীলপদ দাশ নন। এখানকার প্রায় অর্ধশতাধিক ঋষি ও জেলে পরিবার আজ নিজের বসত বাড়ি হারিয়ে অন্য স্থানে চলে গেছে। অনেকের পাকা ঘরবাড়ি একেবারেই নদী গর্ভে ভেঙে গেছে, আবার কোনোটার অর্ধেক ভেঙেছে, বাকিটুকুও যে কোনো সময়ে ভেঙে নদীর মধ্যে চলে যেতে পারে।

আটলিয়া ইউনিয়নের সাবেক মেম্বর প্রয়াত খোরশেদ আলমের শত বছরের পুরনো বাড়িটিরও বেশিরভাগ অংশ ভেঙে নদীতে চলে গেছে। অবশিষ্ট অংশে তার পরিবারের সদস্যরা আর বসবাস করতে সাহস পান না। খোরশেদ আলমের ছেলে আব্দুস সাত্তার ও আব্দুল গফ্ফার ভাঙনের স্থান থেকে দূরে ঘর তৈরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। কিন্তু আতঙ্কেই তাদের দিনরাত পার হচ্ছে।  

অবস্থাপন্ন জেলে পরিবারের গৃহবধূ বাসন্তী বিশ্বাস (৪২) বলেন, “রাত হলেই আতঙ্কে থাকতে হয়। এই বুঝি ঘরটি ভেঙে গেল।”

তিনি বলেন, “আমাদের দুটি পাকা ঘর, গোয়াল ঘর, মুরগীর ঘর সবই ছিল পাকা। একেক করে প্রায় সব ঘর নদীতে ভেঙে গেছে। এখন যে ঘরটিতে বসবাস করছি তারও কিছু অংশ ভেঙ্গে নদীতে চলে গেছে।”

আটলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ বদরুজ্জামান তসলিম বলেন, “রবাতিয়া গ্রামে ভদ্রা নদীর পাড়ে প্রায় ৫০টি পরিবার বসবাস করতেন। তাদের মধ্যে মাত্র ৫/৬টি পরিবার এখন সেখানে বসবাস করলেও অন্যরা ওই স্থান ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে।”

তিনি বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিলেও তা কাজে আসেনি।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা মো. হাসনাতুজ্জামান বলেন, “ভাঙন রোধের জন্য সেখানে ব্লক ফেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আগের মত আর ভাঙন নেই।”

এ বিষযে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামছুদ্দৌজা বলেন, “ভদ্রা নদীর বরাতিয়া ও খর্নিয়া অংশে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনরোধে বিভিন্ন সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।”

নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ


নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়