News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:২০, ২৭ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ১৯:৩৮, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

চিরিরবন্দরে জলপ্রপাত

বদলে দিয়েছে কৃষকের ভাগ্য

বদলে দিয়েছে কৃষকের ভাগ্য

দিনাজপুর: চিরিরবন্দর রাবার ড্যাম প্রকল্প বদলে দিয়েছে এলাকার কৃষকদের ভাগ্য। প্রায় ১০ ফুট উঁচু হাওয়ায় ফোলানো রাবার বেলুনের ওপর দিয়ে প্রচন্ড গর্জন তুলে তীব্র বেগে আছড়ে পড়ছে এ জলপ্রপাত। এ জলপ্রপাত আসলে উপজেলার ৮ নং সাইতাড়া ইউনিয়নের কাঁকড়া নদীতে সেচকাজে নির্মিত রাবার ড্যাম।

এ রাবার ড্যাম প্রকল্প শুষ্ক নদীর দু’কূলের প্রায় ৭ হাজার কৃষক পরিবারের ৭০ হাজার মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। কৃষকদের ভাগ্য বদলানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরি করেছে আরো ১২ হাজার মানুষের। জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে এলাকায় এনেছে নান্দনিক সৌন্দর্য।

উল্লেখ্য, উপজেলার কৃষকদের চাষাবাদেও সুবিধার জন্য ২০১১ সালে উপজেলার ৮ নং সাইতাড়া ইউনিয়নের কাঁকড়া নদীর উপরে দিনাজপুর এলজিইডি  ৮ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৩০ ফুট দীর্ঘ এ রাবার ড্যাম নির্মাণ করে।

চিরিরবন্দর কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ রাবার ড্যাম নির্মাণের ফলে চিরিরবন্দর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রাই ও কাঁকড়া নদীর ১১ কিলোমিটার এবং পার্শ্ববর্তী ১৫ কিলোমিটার কয়েকটি শাখানদীতে বছরের পুরো সময় পানি থাকে।

সূত্র আরো জানায়, উপজেলার ২৪টি ব্লকের মধ্যে ১২টি ব্ল¬কের ২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে। প্রায় ৫ হাজার ৫৫০ কৃষক ড্যামের পানি তাদের জমিতে সেচ কাজে ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হয়েছে।

বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক গোলাম রব্বানী নিউজবাংলাদেশকে বলেন, এ অঞ্চলের জমি উর্বর। এরপরও সেচের অভাবে অনাবাদি ছিল। রাবার ড্যাম নির্মিত হওয়ায় এখন নিয়মিত ৩টি ফসল হচ্ছে। আমন, ইরিবোরো ও সরিষাসহ অন্যান্য ফসলের চাষ কওে তারা লাভবান হচ্ছে। নদী ও খাল থেকে পানি তুলে কৃষকরা অনায়াসে জমিতে সেচ দিচ্ছে।

দক্ষিণ পলাশবাড়ী গ্রামের কৃষক হামিদুল হক নিউজবাংলাদেশকে জানান, আগে এক বিঘা জমিতে ১৫-২০ মণ ধান হতো। রাবার ড্যাম হওয়ায় সেচ সুবিধার কারণে এখন প্রতি বিঘায় ৩৫ থেকে ৪০ মন ধান উৎপন্ন হচ্ছে। অন্যান্য ফসলেরও বাম্পার ফলন হচ্ছে। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখেই দিন কেটে যাচ্ছে।

রাবার ড্যাম প্রকল্প পরিদর্শন করে দেখা গেছে, উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে আবহমান কাঁকড়া নদীর ওপরে রাবার ড্যামটি নির্মিত। নদীর উত্তর দিকে যত দূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। কোথাও ২০  ফুট আবার কোথাও ২৫ ফুট পানির গভীরতা।

গাঢ় সবুজ রঙের পানির ওপর দিয়ে ছুটে চলেছে ছোট-বড় অসংখ্য নৌকা। এসব নৌকায় যাত্রীরা পারাপার হচ্ছে। মাছ ধরার কাজে ব্যবহারের জন্য রাবার ড্যামের ওপরে একটি ফুট ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। এরই পাশে দর্শনার্থীদেও সুবিধার জন্য সিমেন্ট কংক্রিটের মনোরম ছাতা, বসার বেঞ্চ ও বাংলো টাইপ ঘর তৈরি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা নিউজবাংলাদেশকে জানান, রাবার ড্যাম প্রকল্প এ এলাকার চিত্র বদলে দিয়েছে। ড্যামের তীরে গড়ে উঠেছে বাজার। এ বাজারে হোটেল, মনিহারী, চিকিৎসালয়, সার, কীটনাশক, জ্বালানীসহ সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ প্রায় দেড় শতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে। এরই ফলে এলাকার একটি বড় অংশের মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বিপ্ল¬ব কুমার মোহন্ত নিউজবাংলাদেশকে জানান, রাবার ড্যাম প্রকল্প শুধু কৃষকদের ভাগ্যই বদলায়নি, ওই এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশে বিরাট ভারসাম্য এনেছে। নদীর দু’কূলে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য গাছ থাকায় গোটা এলাকা পাখির কলকাকুলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এটিএস

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়