সেকেন্ড হোমের নামে অর্থ পাচার: রাজনীতিক-আমলারা তালিকায়
ঢাকা: সেকেন্ড হোম বা দ্বিতীয় আবাসের নামে বিদেশে অর্থ পাচার ক্রমেই বাড়ছে। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাসহ চিহ্নিত একটি অসাধু চক্র এই পদ্ধতিতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
দুদক সূত্র জানায়, সেকেন্ড হোমের নাম করে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ টিম। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাসহ চিহ্নিত একটি অসাধু চক্রের প্রায় ৫শ জনের তালিকা হাতে নিয়ে এবার মাঠে নেমেছে দুদক।
অপরদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদেশে বাড়ি করা বা সেকেন্ড হোম প্রকল্পে আবেদন করেছেন ৬৪৮ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। যার মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের ২৮৭ জন, বিএনপি-জামায়াতের ৯৬ জন এবং বাকি ২৬৫ জন সুবিধাভোগী শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও আমলা রয়েছেন।
দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ মোরশেদ আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বিশেষ টিমকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। যেখানে ক্ষমতাসীন দলেরসহ অন্য রাজনৈতিক নেতাদের নাম ও রয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নিউজবাংলাদেশ.কমকে জানান, সেকেন্ড হোম প্রজেক্টটি বর্তমানে মালয়শিয়ায় চালু রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ওই প্রকল্পে অনেক বিত্তশালীরা বাড়ি বানিয়েছেন বা অনেকে আবার বাড়ি করার জন্য আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। এবিষয়ে কাজ করছে দুদক।
তিনি আরো বলেন, “দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিরাপদ আশ্রয় খোঁজার উদ্দেশ্য নিয়েই এ ধরনের তৎপরতা চলছে। বর্তমান সরকারের সময়ে এ তৎপরতা আরো বেড়েছে। সবকিছু ছাপিয়ে বড় কথা হলো ছলে বলে কালো টাকা বিদেশে পাচার করা। এ বিষয়ে চাঞ্চল্যকর আরো কিছু তথ্যও দুদক ইতিমধ্যে সংগ্রহ করেছে।”
দুদক সূত্র জানায়, সেকেন্ড হোম প্রকল্পের ব্যানারে বিদেশে পাড়ি জমানোর ওই তালিকার শীর্ষে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিকরা। সুবিধাভোগী শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও আমলারা দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছেন। আর তালিকায় তৃতীয় তালিকায় রয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের কিছু নেতা।
জানা গেছে, সেকেন্ড হোমের মধ্যে মালয়েশিয়ার পরেই রয়েছে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ। এ দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা ও স্ব-কর্মসংস্থান কোটায় সহজেই ভিসা পাওয়া সহজ হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, “কোনো আইনি পদ্ধতিতে এ ধরনের লেনদেনের সুযোগ নেই। যারা এই বেআইনি কাজ করছে তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। এতে অসঙ্গতি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ পাচার নিয়ে গবেষণা করে থাকে গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি বা জিএফআই প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে অন্তত এক হাজার ৬০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা এক লাখ ২৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা অবৈধভাবে বাইরে চলে গেছে।
২০১৪ সালের শুরুতে সুইস ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, এ ব্যাংকে ২০১৩ সালে ৩৭ কোটি ২০ লাখ ফ্রাঁ বা তিন হাজার কোটি টাকা রাখেন বাংলাদেশী আমানতকারীরা। আগের বছর ২০১২ সালে এর পরিমাণ ছিল ২২ কোটি ৯০ লাখ ফ্রাঁ বা এক হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। ২০১১ সালে ছিল ১৫ কোটি ২০ ফ্রাঁ বা এক হাজার ৩২০ কোটি টাকা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/টিআইএস/এসজে
নিউজবাংলাদেশ.কম