যশোরে স্ত্রী-ছেলে হত্যা করেন ক্যান্সার রোগী আহাদ আলীকে
মূত্রথলির ক্যান্সারের রোগী ছিলেন আহাদ আলী (৪৫)। গত কয়েক মাস ধরে তিনি এ রোগে ভুগছিলেন। পাঁচ মাস আগে তিনি মুত্রথলির অপারেশন করান। ক্যান্সারে আক্তান্ত হওয়ার কারণে তিনি ঘরে বসেই দিন পার করতেন। কোনো কাজকর্ম করতে পারতেন না। ইতোমধ্যে চিকিৎসার জন্য জমিজমা বিক্রি করে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম অভাবে দিনাতিপাত করছিলেন। কলেজ পড়ুয়া ছেলে হারুন-অর-রশিদ (১৯) লেখাপড়ার পাশাপাশি ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করেন। অভাবের সংসারে ছেলে ও মায়ের সাথে আহাদ আলীর প্রায় সময় ঝগড়া হতো।
আহাদ আলী ক্যান্সারের রোগী হাওয়ায় মৃত্যু অবধারিত ভেবে তিনি জীবনের শেষ ইচ্ছা পূরণের ইচ্ছা পোষণ করেন। সে লক্ষ্যে আহাদ আলী ১৫ দিন আগে জমি বিক্রি করে গাড়ি কেনার জন্য উদ্যোগ নেন। কিন্তু স্ত্রী-ছেলে এ কাজে বাধা দেন। এবং তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। আক্রোশে ছেলে হারুন-অর-রশিদ আর স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৩৬) মিলে আহাদ আলীকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন।
ঘটনার দিন যথারীতি আহাদ আলী রাতের খাবার খেয়ে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। মা-ছেলের পরিকল্পনা মোতাবেক ঘরে থাকা ছুরি বাঁশের লাঠির সাথে বেঁধে ১৩ মে গভীর রাত আড়াইটার দিকে পাকা ঘরের দেয়ালের জানালার ইটের ফাঁকা দিয়ে ছেলে হারুন-অর-রশিদ তার বাবা আহাদ আলীর বুকে আঘাত করেন। ছুরি বিদ্ধ হয়ে কাতরাতে কাতরাতে শোয়ার খাট থেকে পড়ে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়। সকালে মা ছেলে মিলে হত্যাকাণ্ডের চিহ্ন ঢাকতে প্রতিবেশীদের ডাকাডাকি করতে থাকেন। প্রতিবেশীরা এসে পুলিশকে ফোন দিলে পুলিশ আহাদ আলীর বাড়িতে পৌঁছে দরজা ভেঙে তার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে।
এই ঘটনার পরের দিন নিহতের বড় ভাই মো. আবেদ আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন থানায়।
মামলাটি স্পর্শশকাতর হওয়ায় যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেন যশোর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ সদস্যদের। যশোর গোয়েন্দা পুলিশের নিবিড়় তদন্তে এ লোমহর্ষক ঘটনা সামনে আসে।
একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে যশোর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা ঘাতক মা-ছেলেকে চৌগাছার দূর্গাবরকাঠি গ্রাম থেকে আটক করেন। এই লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছে চৌগাছার দূর্গাবরকাঠি গ্রামে।
যশোর গোয়েন্দা পুলিশের অফিস ইনচার্জ সমেন দাস বলেন, “বৃহস্পতিবার হত্যার ঘটনার পর তার ভাই চৌগাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় পুলিশ সুপার যশোর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেন। একপর্যায়ে তদন্ত করে দেখা যায় আহাদ আলীর ঘাতক তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে হারুন-অর-রশিদ ও স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৩৬)। গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে মা-ছেলেকে আটক করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের কাজে ব্যবহৃত ছুরি, দড়ি ও বাঁশ উদ্ধার করা হয়েছে। আটকরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ