নিম্নমানের সামগ্রীতে চলছে যশোর রেলওয়ের উন্নয়ন কাজ
তরিকুল ইসলাম মিঠু : যশোরে রেলওয়ের সড়ক সংস্কারে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যশোর মুজিব সড়ক রেলগেট থেকে রেল স্টেশনের রাস্তা সংস্কারণ, ড্রেনেজ সংস্করণ, বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য রেলওয়ে স্টেশনের দুই পাশে ইয়ার্ড নির্মাণ, ইয়ার্ডের পাশে রাস্তা সংস্করণে এ অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, যশোর রেল স্টেশনে প্রবেশ মুখ থেকে স্টেশন পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ ও নতুন ড্রেন নির্মাণের জন্য ঈশ্বরদীর পাকশী বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক কোটি ৬২ লাখ টাকা মূল্যের কাজটি পায়।
অপরদিকে, ঢাকার কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্টেশনের প্লাটফর্মের পাশের রাস্তার কার্পেটিং, লোড-আনলোড ইং প্ল্যাটফর্ম, মালামাল রাখার সেড নির্মাণের কাজটি পায়। এ প্রকল্পের বরাদ্দ পায় দুই কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মাস খানেক আগে থেকে কাজ শুরু করেন। প্রথমে যশোর মুজিব সড়ক থেকে রেল স্টেশন পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ও ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করেন পাকশী বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজের মালিক নিজামুদ্দিন। কাজের শুরু থেকেই ড্রেন নির্মাণ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। নিম্নমানের বালু, কম মাত্রার সিমেন্ট, খোয়া দ্বারা পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ নির্মাণ করা হয়। যেটি দেখে স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
অপরদিকে রাস্তা সংস্কারে রাস্তার উপরের অংশ ট্রাক্টরের লাঙ্গল দিয়ে উঠিয়ে ফেলে তার উপরে নিম্নমানের স্থানীয় বালু, ইটের খোয়া দিয়ে রোলার করে দিয়েছে। এখন বাকি আছে শুধুমাত্র বিটুমিন দিতে।
অপর ঠিকাদার ঢাকার কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার হুমায়ূন আহমেদ মাসখানেক আগে রেল স্টেশন ইয়ার্ডের কাজ শুরু করেছে। কাজ শুরু করার পূর্বে প্লাটফর্মের পাশে কিছু কুষ্টিয়ার বালুর পাশে স্থানীয় নিম্নমানের কয়েক ট্রাক বালুর নিয়ে রেখেছে। যা দেখে এলাকার মানুষের ভিতরে চাপা ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কোনোরকম মাটি খুঁড়ে গর্ত করা বেজ ছাড়াই মাটির উপর থেকে সেড নির্মাণ তৈরি করছে। কাজ করার সময় ব্যবহার করা হচ্ছে অতি নিম্নমানের ইটখোয়া ও নিম্নমানের সিমেন্ট। আবার নির্ধারিত কাজের ওয়ার্ক অর্ডার মানা হচ্ছে না সিমেন্ট সিমেন্ট, বালু, খোয়ার রেশিও।
যশোর রেল স্টেশন এলাকায় মুজিব বাহিনীর প্রধান মুক্তিযোদ্ধা মনির উদ্দিন মনি বলেন, “আমি প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হয়ে। স্টেশন এলাকায় ড্রেনেজ নির্মাণ, রাস্তা সংস্করণ, বাণিজ্য সম্প্রসারণের সেড নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের বিষয়টি আমার চোখে পড়ে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো এলাকার কিছু চিহ্নিত লোকজন কে সাথে নিয়ে এসব সংস্করণ কাজ করছে। যে কারণে আমি কিছুই বলতে পারছিনা। বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলাম দেশের থেকে অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য। কিন্তু আমরা সেটা বন্ধ করতে পারিনি। এটি বড় আফসোসের। প্রায় সময় রেল স্টেশন এলাকায় বিপুল অংকের বাজেটে সংস্করণ ও নতুন নির্মাণ কাজ চলে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেসব কাজ পুরোটাই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে জনসাধারণের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ বাড়ে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভৌত অবকাঠামো গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়নের কাজ চালাচ্ছেন। কিন্তু এ ধরনের কিছু ঠিকাদারের কারণে শেখ হাসিনার সরকারকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। এটা চরম অন্যায়।”
তাই তিনি রাস্তা নির্মাণের ও সেড নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।
রেলওয়ে কাঁচামাল বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা গত দুই বছর যাবৎ এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারতাম না। রাস্তা ভেঙে বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছিল। আমরা সাংবাদিকদের বিষয়টি কয়েকবার জানিয়েছি। রাস্তার মাঝে গর্তে মাছ ছেড়েছি। সাংবাদিকরা সেই মাছ ছাড়ার নিউজ করেছে। এক পর্যায়ে সরকার রাস্তা সংস্কারের জন্য বিপুল অংকের টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় নিম্নমানের বালু, কিঞ্চিত পরিমাণের সিমেন্ট, নিম্নমানের খোয়া দিয়ে ড্রেনেজ, বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন সেড ও রাস্তা তৈরি করছে। যা আগের মত বছর পার হতে না হতেই সব সংস্কার করা রাস্তাও ড্রেনেজ নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে জনগণের চলাচলে ভোগান্তি বাড়বে।”
ড্রেনেজ ও রাস্তা নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ঈশ্বরদীর বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজের মালিক নিজাম উদ্দিন বলেন, “আমরা ভালো মানের ইট, খোয়া, সিমেন্ট দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছি। এক বছরের ভিতর নষ্ট হওয়ার কথা নয়। তবে অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই নিয়ে যদি এ রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল করে তাহলে তো রাস্তা নষ্ট হবেই।”
নিম্নমানের বালু সিমেন্ট খোয়া দিয়ে রাস্তা সংস্কার ও নির্মাণের বিষয়টি জানতে চাইলে ঢাকা কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার হুমায়ূন আহমেদ বলেন, “আমার বস ঢাকার প্রভাবশালী একজন ঠিকাদার। তিনি সবাইকে ম্যানেজ করেই ঠিকাদারি কাজ করে থাকেন। আমাকে তিনি যেভাবে কাজ করতে বলেছেন আমি সেভাবেই কাজ করছি। তাই এখানে আমার ব্যক্তিগতভাবে কোনো কাজ করার সুযোগ নেই।”
যশোর সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজি ওয়ালি উল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কাজের বিস্তারিত জানতে হলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ফর্মে আবেদন করতে হবে।”
কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয়ের আবেদন ফরমে আবেদন করার পরেও তিনি কাজের তথ্য দেননি। কাজের তথ্য দেয়ার কথা বলে এ প্রতিবেদকের সাথে এক মাস ধরে ছলচাতুরি করেন।
তিনি আরো বলেন, “রেলের ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।”
কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেখতে চাইল তিনি বলেন, “এটা রেলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কোনো সাংবাদিককে কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেখানো যাবে না।”
রেলওয়ের পাকশী নির্বাহী প্রকৌশলী বিমল মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের যশোরে একজন কর্মকর্তা আছেন তিনি বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।”
এই বলে তিনি তার ফোনের লাইনটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
উল্লেখ্য এ কর্মকর্তা এর আগে যশোরে প্রায় পাঁচ বছর কর্মরত ছিলেন। সেই সময় এ কর্মকর্তা নানা অনিয়মের জড়িয়ে পড়েন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ