যশোরে কর্মহীন পরিবারের জন্য বরাদ্দ ১৪ কোটি টাকা
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশে দেশে লকডাউন চলছে। বাংলাদেশে আফ্রিকান ধরনের ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সরকার সংক্রমণ রোধে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন দিয়েছে। লকডাউনে দেশের কয়েক কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের জন্য সরকার ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ কর্মসূচিতে সারাদেশে কর্মহীন বেকারদের আর্থিক সুবিধা দেয়া হবে।
এ কর্মসূচির আওতায় যশোরে তিন লাখ ১০ হাজার সাতশ ৭৮ পরিবারকে ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) কর্মসূচির মাধ্যমে ১৩ কোটি ৯৮ লাখ ৫৯ হাজার একশ’ টাকা সহায়তা দেয়া হবে। চারশ ৫০ টাকা হারে সহায়তা পাবে প্রতিটি কর্মহীন পরিবার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে কোন এলাকায় কতজন প্রধানমন্ত্রীর সহায়তার টাকা পাবেন তার তালিকা প্রস্তত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কর্মহীনদের তালিকা তৈরি করতে রোববার পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কাছে নির্দেশনা দেয়া হবে। তারা যে তালিকা পাঠাবেন সে অনুযায়ী আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সহায়তার টাকা সংশ্লিষ্টদের হাতে পৌঁছে দেয়ার কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সার্বিক এ কাজে তদারকি করবেন উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ট্যাগ অফিসাররা। দুস্থ, অসহায়, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ, অসহায় মুক্তিযোদ্ধারা এ টাকা পাবেন বলে জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ভিত্তিক যে বরাদ্দ দেয়া হবে তার মধ্যে রয়েছে সদরে ২২ হাজার আটশ ৭৩ পরিবারের মধ্যে এক কোটি দুই লাখ ৯২ হাজার আটশ ৫০ টাকা ও পৌরসভায় চার হাজার ছয়শ ২১ জনের মধ্যে ২০ লাখ ৭৯ হাজার চারশ ৫০ টাকা, ঝিকরগাছায় ৫৯ হাজার সাতশ ৬৫ জনের মধ্যে দুই কোটি ৬৮ লাখ ৯৪ হাজার দুইশ ৫০ টাকা ও পৌরসভায় তিন হাজার ৮১ জনের মধ্যে ১৩ লাখ ৮৬ হাজার চারশ ৫০ টাকা, চৌগাছায় ৪৬ হাজার সাতশ ৩৫ জনের মধ্যে দুই কোটি ১০ লাখ ৩০ হাজার সাতশ ৫০ টাকা ও পৌর এলাকায় তিন হাজার ৮১ জনের মধ্যে ১৩ লাখ ৮৬ হাজার চারশ ৫০ টাকা, অভয়নগরে ৪০ হাজার নয়শ ৭৯ পরিবারের মধ্যে এক কোটি ৮৪ লাখ ৪০ হাজার পাঁচশ ৫০ টাকা ও পৌর এলাকায় চার হাজার ছয়শ ২১ জনের মধ্যে ২০ লাখ ৭৯ হাজার চারশ ৫০ টাকা, মণিরামপুরে ৬৩ হাজার সাতশ ৬২ জনের মধ্যে দুই কোটি ৮৬ লাখ ৯২ হাজার নয়শ টাকা ও পৌর এলাকায় চার হাজার ছয়শ ২১ জনের মধ্যে ২০ লাখ ৭৯ হাজার চারশ ৫০ টাকা, কেশবপুরে ১৫ হাজার একশ ৩০ পরিবারের মধ্যে ৬৮ লাখ আট হাজার পাঁচশ টাকা ও পৌরসভায় চার হাজার ছয়শ ২১ জনের মধ্যে ২০ লাখ ৭৯ হাজার চারশ ৫০ টাকা, শার্শা উপজেলায় ২০ হাজার একশ ৭০ জনের মধ্যে ৯০ লাখ ৭৬ হাজার পাঁচশ টাকা ও বেনাপোল পৌরসভায় চার হাজার ছয়শ ২১ জনের মধ্যে ২০ লাখ ৭৯ হাজার চারশ ৫০ টাকা, বাঘারপাড়ায় দশ হাজার পাঁচশ ৭৭ জনের মধ্যে ৪৭ লাখ ৫৯ হাজার ছয়শ ৫০ টাকা ও পৌর এলাকায় এক হাজার পাঁচশ ৪০ জনের মধ্যে ছয় লাখ ৯৩ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যারা টাকা পাওয়ার যোগ্য তাদের তালিকা তৈরির জন্য কমিটি করা আছে। কেউ বলেছেন, তাদের জানা আছে কোন এলাকার কে কর্মহীন। ফলে সেভাবেই তারা কর্মহীনদের কাছে এ টাকা পৌঁছে দেবেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান বলেন, “উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সহায়তার টাকা ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হবে। সেগুলো বাস্তবায়ন করবেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। আগামী সাত দিনের মধ্যে বিতরণ শুরু হবে। ঈদের আগেই তা কার্ডধারীদের হাতে তুলে দেয়া হবে।”
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, “মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে দ্বিতীয় ধাপের লকডাউনের ফলে যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা এসেছে। যশোরে প্রায় ১৪ কোটি টাকা এসমস্ত কর্মহীন ব্যক্তিদের দেয়া হবে। প্রতিটি উপজেলার উপজেলা কর্মকর্তাদের সহায়তায় এসব টাকা ইউনিয়ন ও পৌরসভায় পৌঁছান হবে। এরপর জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা এ টাকা গ্রহণ করবেন।”
তবে সঠিক ব্যক্তি যেন টাকাগুলো পায় তার জন্য দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।