পাকিস্তান ভেঙ্গে পড়লো উইন্ডিজের হাঁটুর কাছে
আন্দ্রে রাসেলের অলরাউন্ড নৈপুণ্য ও জেরোম টেইলরের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাকিস্তানকে সহজেই রানে ১৫০ হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ওয়ানডের সেরা টুর্নামেন্টে এটি পাকিস্তানের টানা দ্বিতীয় পরাজয়। এর আগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হারে তারা। অন্য দিকে, আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেয়েছে প্রথম জয়।
দিনেশ রামদিন ও লেন্ডল সিমন্সের দুই অর্ধশতকের সঙ্গে শেষ দিকে রাসেলের তাণ্ডবে বড় সংগ্রহ গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেইলরের মারাত্মক বোলিংয়ে প্রথম ওভার থেকেই উইকেট হারানো পাকিস্তান আর খেলায় ফিরতে পারেনি।
শনিবার ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৩১০ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে ৩৯ ওভারে ১৬০ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান।
এশিয়ার বাইরে কখনো তিনশ’ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে পারেনি পাকিস্তান। তাই দারুণ একটা শুরু প্রয়োজন ছিল তাদের। তা তো হয়নি, বরং ওয়ানডের সবচেয়ে বাজে শুরু করে তারা।
টেইলরের তোপে শুরুতেই দিক হারায় পাকিস্তান। মাত্র ১ রানে প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ভীষণ বিপদে পড়ে দলটি।
প্রথম ওভারে নাসির জামশেদ ও ইউনুস খানকে বিদায় করেন টেইলর। পরের ওভারে হারিস সোহেলের উইকেটও নেন এই পেসার। চতুর্থ ওভারে আহমেদ শেহজাদকে বিদায় করে পাকিস্তানের বিপদ আরো বাড়ান অধিনায়ক জ্যাসন হোল্ডার।
দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হকও। ৭ রান করে রাসেলের বলে স্লিপে ক্রিস গেইলকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি।
ষষ্ঠ উইকেটে শোয়েব মাকসুদ ও উমর আকমলের ৮০ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে পাকিস্তান। ড্যারেন স্যামির বলে মাকসুদ (৫০) সুলেমান বেনের দারুণ ক্যাচে পরিণত হলে ভাঙে ১৫ ওভার স্থায়ী জুটি।
শহিদ আফ্রিদির সঙ্গে ৩৪ রানের আরেকটি জুটি গড়ে বিদায় নেন অর্ধশতক পাওয়া আরেক ব্যাটসম্যান আকমল। সর্বোচ্চ ৫৯ রান করা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ৭১ বলের ইনিংসটি গড়া ৫টি চার ও ১টি ছক্কায়।
আকমলের বিদায়ের পর বেশিদূর এগোয়নি পাকিস্তানের ইনিংস। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেয়ার আগে ২৮ রান করেন আফ্রিদি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেইলর ও রাসেল তিনটি করে উইকেট নেন। দুটি উইকেট নেন বেন।
এর আগে শুরুটা ভালো হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ২৮ রানেই হারায় দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে হারায় তারা।
পঞ্চম ওভারেই বিদায় নেন গেইল। বাঁহাতি এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে ফেরান মোহাম্মদ ইরফান। অষ্টম ওভারে আঘাত হানেন সোহেল খান। একবার জীবন পাওয়া ডোয়াইন স্মিথকে ফেরান তিনি।
তৃতীয় উইকেটে মারলন স্যামুয়েলসের সঙ্গে ৭৫ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন ড্যারেন ব্র্যাভো। স্যামুয়েলসকে বদলি ফিল্ডার ইয়াসির শাহর ক্যাচে পরিণত করে ১৬.২ ওভার স্থায়ী জুটি ভাঙেন হারিস।
চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ার আগে ৪৯ রানের ভালো একটি ইনিংস খেলেন ব্র্যাভো।
সিমন্সকে সঙ্গে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন রামদিন। অর্ধশতকে পৌঁছানোর পর হারিসের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। ৪৩ বলে খেলা তার ৫১ রানের ইনিংসটি ৭টি চারে সাজানো।
ড্যারেন স্যামির সঙ্গে সিমন্সের ৬৫ রানের চমৎকার জুটিতে আড়াইশ’ পার হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ। ওয়াহাব রিয়াজের বলে আফ্রিদির ক্যাচে পরিণত হয়ে স্যামি বিদায় নিলেও দ্রুত রান সংগ্রহের পথে তা কোনো প্রভাব ফেলেনি।
এসেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা রাসেলের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে তিনশ’ পার হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ। মাত্র ১৭ বলে ৫১ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে।
শেষ বলে রান আউট হওয়ার আগে ৫০ রান করেন সিমন্স। তার ৪৬ বলের ইনিংসটি ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় গড়া।
মাত্র ১৩ বলে অপরাজিত ৪২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ম্যাচ সেরা রাসেল। তার বিধ্বংসী ইনিংসটি ৪টি ছক্কা ও ৩টি চারে সাজানো।
পাকিস্তানের হারিস ২ উইকেট নেন ৬২ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ৩১০/৬ (স্মিথ ২৩, গেইল ৪, ব্র্যাভো ৪৯*, স্যামুয়েলস ৩৮, রামদিন ৫১, সিমন্স ৫০, স্যামি ৩০, রাসেল ৪২*; হারিস ২/৬২, ইরফান ১/৪৪, ওয়াহাব ১/৬৭, সোহেল ১/৭৩)
পাকিস্তান: ৩৯ ওভারে ১৬০ (জামশেদ ০, শেহজাদ ১, ইউনুস ০, হারিস ০, মিসবাহ ৭, মাকসুদ ৫০, আকমল ৫৯, আফ্রিদি ২৮, ওয়াহাব ৩, সোহেল ১, ইরফান ২*; ৩/১৫, রাসেল ৩/৩৩, বেন ২/৩৯, হোল্ডার ১/২৩, স্যামি ১/৪৭)
ম্যাচ সেরা: আন্দ্রে রাসেল
এসআর/আরএম
নিউজবাংলাদেশ.কম