সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলে হঠাৎ বন্যা, বিপাকে কৃষক
কয়েকদিন আষাঢ়ের টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের যমুনার চরাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্নের ফসল। চলতি মৌসুমে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করা কৃষকরা এখন পানির নিচের অপরিপক্ক ফসল কাটায় ব্যস্ত।
বুধবার জেলার চরাঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে চরের শত শত হেক্টর জমির পাট, তিল, বাদাম, ভুট্টা, আউশ, কাউন, আখ ও সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে থাকা এসব ফসল পচতেও শুরু করেছে। ফলে পরিপক্ক হওয়ার আগেই ফসল কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে অন্যের জমি বর্গা ও চড়া সুদে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করা প্রান্তিক চাষিরা। হঠাৎ নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়া কৃষকদের জন্য ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জে ৯৫৫ হেক্টর জমির পাট, ৩৭১ হেক্টর তিল, ১০ হেক্টর ভুট্টা, ৫৫ হেক্টর আউশ, ২৩ হেক্টর সবজি, ১৭ হেক্টর কাউন, হেক্টর ৭৮ জমির আখ মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৫০৯ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকের ৫০ শতাংশ ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সদর উপজেলার মেছড়া ইউনিয়নের কৃষক আমজাদ হোসেন (৫৫), আমিনুল ইসলাম (৪৫) ও মকবুল হোসেন বলেন, “প্রতিবারের মতো আমরা এবারও ৬ একর জমিতে পাট, তিল ও আউশ চাষ করেছি। কিন্তু এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে আমাদের অধিকাংশ জমির ফসল। যদিও ফসল পরিপক্ক হয়ে ওঠেনি। অপরিপক্ক ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উৎপাদন নিয়ে আমরা চিন্তিত। পানিতে তলিয়ে থাকা কিছু ফসল কাটতেও শুরু করেছি। অপরিপক্ক পাটগাছ থেকে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক পাট উৎপাদন হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।
সদর উপজেলার মেছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, “যমুনায় হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়া বেশকিছু জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি দ্রুত নেমে না গেলে ফসল ঘরে তুলে নেওয়াও সম্ভব নয়। পাশাপাশি চলছে নদী ভাঙন। চরাঞ্চলে মানুষ চরম বিপাকে দিনানিপাত করছে। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি।”
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সরকার অসীম কুমার জানান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের কাছে ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।
এদিকে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, “দ্রুতগতিতে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে আশা করা যাচ্ছে, পানি আর বৃদ্ধি পাবে না। দুয়েকদিনের মধ্যে কমতে পারে। নিয়মিত নদীর তলদেশ সার্ভে করছি। যাতে কোথাও কোনো ক্রটি থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে পারি। বাঁধগুলোর অবস্থা ভালো আছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. হাবিবুল ইসলাম জানান, বৃষ্টির পানিতে জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ৩০টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ১ হাজার ৫০৯ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। ফসল বেশিদিন পানিতে থাকলে গোড়া পচে গাছ মরে যাবে। তবে দ্রুত পানি নেমে গেলে গাছ বেঁচে যাবে ও উৎপাদন স্বাভাবিক হবে।
এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক কৃষকদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ