করোনা ঠেকাতে লাল, সবুজ ও হলুদ জোনে ভাগ হচ্ছে দেশ
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে নতুন পরিকল্পনা গহণ করতে যাচ্ছে সরকার। এর আওতায় সারা দেশকে লাল, সবুজ ও হলুদ জোনে ভাগ করা হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
লকডাউনের পর সীমিত পরিসরে অফিস খোলার দ্বিতীয় দিন সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক শেষে তিনি একথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অনুযায়ী সারা দেশকে রেড, গ্রিন ও ইয়োলো জোনে ভাগ করা হবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম নিয়ে গত পরশুদিন প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছি। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিস্তারিত এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন সে পরামর্শ অনুযায়ী আমরা আজ বসলাম।
“আমরা একটা প্ল্যান তৈরি করব। প্ল্যান নীতিগতভাবে এখানে (সভায়) আলোচনা হয়ে গেছে। আমরা এখন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিয়ে দেব। তখন মেয়র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং আমরাও (স্বাস্থ্য) থাকব। সবাই মিলে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব।”
কী পরিকল্পনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত এটাই। এখন বিশেষজ্ঞরা তারা কীভাবে বাস্তবায়ন করবে বা জোনিং করবে সেটা তারা জানে।”
এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “এখনও জোন করা হয়নি। যখন করা হবে তখন জানতে পারবেন। ঢাকা, নারায়াণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছে। যদি কোনো জোন রেড হয়ে থাকে সেগুলোকে রেড করা হবে।
“বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলা ও উপজেলা এখনও অনেকাংশে ভালো আছে। আমরা সেটা ভালো রাখতে চাই। ভালো রাখার জন্য আজকে এই সভা।”
এলাকাভিত্তিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, “জোনিংয়ের মাধ্যমেই সব করা হবে। যে জোনের মধ্যে খুব বেশি সংক্রমিত হবে; ছোট্ট এলাকা, ঢাকার ভেতরে… ধরেন একটা ছোট্ট এলাকা-সেখানে হয়ত একটি এলাকাকে বলব যে, এই এলাকা বন্ধ থাকবে এই কয় দিনের জন্য। এভাবে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেবে, সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করব।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথায় জোনে ভাগ করা নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা পাওয়া যায়নি। তবে গত শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরেছিলেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।
ভাইরাস সংক্রমণের এই অবস্থায় অফিস, কারখানা, গণপরিবহন চালুর সমালোচনা করে তিনি বলেছিলেন, যে অর্থনীতি সচল করার জন্য এগুলো করা হচ্ছে বাস্তবে তা না হয়ে উল্টো ফল দিতে পারে।
আহসান মনসুর জানান, এই সংকট মোকাবেলা করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে মার্চ মাসের শুরুতেই তিনি কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন।
“সারা দেশকে লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে ভাগ করতে সরকারকে অনুরোধ করেছিলাম। আমি বলেছিলাম, রেড জোন অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ সব ধরনের কাজ বন্ধ থাকবে; একেবারে জরুরি অবস্থার মতো। কোনো কিছু চলবে না, সবাই বাসায় থাকবে।
“হলুদ জোনে দেখে-শুনে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে অনুরোধ করেছিলাম। আর সবুজ জোনে মোটামুটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে বলেছিলাম।”
তার ওই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের নিরিখে সারা দেশকে লাল, সবুজ ও হলুদ জোনে ভাগ করার পরিকল্পনা হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি।
এই ভাগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জকে রেড জোনে ফেলা হবে কি না, তা চাওয়া হয়েছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, “এ কাজ বিশেষজ্ঞরা করবে। তবে আমরা মনে করি রেড জোন হওয়া উচিত, কারণ এখানে তো অনেক সংক্রমিত।”
বৈঠক শেষ স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সংক্রমণের হার প্রতিদিনই বাড়ছে। পাশাপাশি করোনাভাইরাস পরীক্ষার হারও বাড়ছে। আজকে সেজন্য কয়েকটা জোন মার্কিং করছি। যেমন, রেড, গ্রিন ও ইয়োলো। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল এই জোনগুলোর মধ্যে রেড জোনকে কীভাবে গ্রিন জোন করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
“স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা দেবেন। সেই প্রস্তাবনা আমরা খব শিগগিরই বাস্তবায়ন করব। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে একটি নির্দেশনা দিয়েছেন যে, ২৫ শতাংশ কর্মকর্তার বেশি কেউ যেন একসাথে অফিসে না আসেন বা পর্যায়ক্রমে তারা যাতে অফিসে আসেন।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি