আম্পানের প্রভাবে ৫৫ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন
ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় 'আম্পান'। ঝড়ের তীব্রতা কিছুটা কমে আসলেও বিভিন্ন স্থানে জোয়ারের পানিতে সৃষ্টি হয় জলোচ্ছ্বাস। এর প্রভাবে বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ।
উপড়ে পড়েছে গাছপালা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি ও ফসল। রাত পৌনে ৩টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় আম্পান ঝিনাইদহে অবস্থান করছে।
এদিকে রাত দুইটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গাছ ও দেয়ালচাপায় এবং নৌকাডুবিতে বিভিন্ন স্থানে ১০ জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ব্যাসের ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কেন্দ্র মোটামুটি চার ঘণ্টা সময় নিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানে গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে। সাতক্ষীরা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় শুরু হয় প্রবল ঝড়ো বাতাসের দাপট। উপকূল অতিক্রম করার সময়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ একশ ৫৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায় দমকা হাওয়া।
স্থলভাগে উঠে আসার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে কমতে শুরু করে ঝড়ের শক্তি। তবে সারারাতই দেশের উপকূলীয় জেলার পাশাপাশি মধ্যাঞ্চল ও উত্তরের বেশ কয়েকটি জেলায়ও হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়।
ঝড়ের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় ভেঙে গেছে শহররক্ষা ও বেড়িবাঁধ। এতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। জোয়ারের পানি লোকালয়েও ঢুকে পড়ে।
মোংলা
ঘূর্ণিঝড় 'আম্পান-এর প্রভাবে বুধবার দিনভর ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হয়েছে বাগেরহাটের মোংলায়। মধ্যরাতে ঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক ঘরবাড়ি। দুর্যোগে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটে যান তারা। প্রশাসনের সতর্কতা মেনে আগেভাগে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় না নেয়ায় এমন দুর্ভোগের শিকার হন উপকূলের বাসিন্দারা।
এদিকে, বরিশালেও দিনরাত বৃষ্টি ও ঝড়ো হওয়া বয়ে যায়। বিভাগের সব জেলায় ছিল একই চিত্র। আম্পানের ঝুঁকি এড়াতে নদীতীরবর্তী বাসিন্দারা আগেভাগেই আশ্রয় নেন সাইক্লোন শেল্টারে। বাঁধ ভেঙে এবং জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর মিলেছে বরগুনা শহরের অনেক এলাকায়।
পটুয়াখালী
বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পটুয়াখালীতে। ঝড়ের কারণে উড়ে গেছে গলাচিপার বেশকিছু দোকান। পায়রা নদীর পানির তোড়ে শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালির ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। রাতে জেলা শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে নিউ মার্কেটসহ পৌরশহরের কয়েকটি এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে। এতে তলিয়ে গেছে নিচু এলাকার রাস্তাঘাট। ভেসে গেছে মাছের ঘেরও।
বাগেরহাট
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে রাতভর বৃষ্টি ও ঝড়ো হওয়া বয়ে গেছে খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভোলা, নোয়াখালী, ফেনীসহ উপকূলীয় এলাকাগুলোতে। এতে ফসলি জমি, মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাতিয়াসহ কয়েকটি চর এলাকায় ১০ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের কথা জানায় আবহাওয়া অফিস।
এদিকে, গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে অনেক উপজেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিদ্যুতের খুঁটি। এ কারণে ঝুঁকি এড়াতে উপকূলীয় অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ৫৫ লাখ মানুষ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ বুলেটিন বলছে, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল থেকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরতে ঝরতে তা রাজশাহী অঞ্চল পেরিয়ে আরও দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হবে। এতে বৃহস্পতিবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ার পাশাপাশি উত্তাল থাকবে সাগর।
নিউজবাংলাদেশ.কম/কেএইচ