News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৪ মে ২০২০
আপডেট: ০৪:২৯, ২০ মে ২০২০

এবার এপ্রিলে ভয়ঙ্কর রূপ দেখিয়েছে বজ্রপাত

এবার এপ্রিলে ভয়ঙ্কর রূপ দেখিয়েছে বজ্রপাত

এবার এপ্রিলে ভয়ঙ্কর রূপ দেখিয়েছে বজ্রপাত। বজ্রপাতের পিকটাইম শুরুর এ মাসে প্রাণ গেছে অন্তত ৮৩ জনের, যা গত বছরের এপ্রিল মাসের তুলনায় প্রায় চার গুণ।
করোনাভাইরাসের কারণে চলমান পরিস্থিতিতে এ বছর বজ্রপাতে কম মৃত্যুর আশঙ্কা করেছিলেন সংশ্নিষ্টরা। কিন্তু প্রথম মাসেই অনেক মৃত্যুর ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে তাদের। নিহতদের অধিকাংশই পুরুষ। এর মধ্যে অন্তত ২৫ জন কৃষক।
জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে পাহাড়ি ঢল এবং বৈরী আবহাওয়া সৃষ্টির আগে গোলায় ধান তুলতে বজ্রপাতের হুমকি নিয়েই মাঠে রয়েছেন কয়েক লাখ কৃষি শ্রমিক। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক গত শনিবার বলেছেন, ধান কাটতে গিয়ে কোনো কৃষক বা শ্রমিক মারা গেলে প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাতে নিহতদের বেশিরভাগই কর্মঠ ব্যক্তি। এদের হারিয়ে একেকটি পরিবার দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে। প্রাণহানি কমাতে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় মোবাইল ফোনের টাওয়ারে লাইটেনিং এরস্টোর লাগানো যেতে পারে। তবে কম কাভারেজ ও ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় সরকার এ পদ্ধতির দিকে যাচ্ছে না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মহসীন বলেন, বিদ্যুতের খুঁটিতে এরস্টোর লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। বজ্রপাতের ভয়ে গত বছর সুনামগঞ্জের হাওরে ধানকাটা শ্রমিক যেতে চায়নি। ভয় দিন দিন বেড়েই চলেছে।
বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরামের হিসাব অনুযায়ী গত বছর এপ্রিলে মারা গিয়েছিল ২১ জন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে সংগঠনটি বলছে, চলতি এপ্রিলে প্রাণহানি হয় ৬২ জনের। তবে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণে ৮৩ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ফোরামের সমন্বয়ক মেহেরুন নেসাও বলছেন, তারা এপ্রিলের সম্পূর্ণ তথ্য এখনও হালনাগাদ করেননি। সংখ্যাটি বাড়তে পারে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২২ থেকে ২৪ এপ্রিল তিন দিনে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছে ৩৬ জন। ২২ এপ্রিল ৬ জেলায় ১৪ জন, ২৩ এপ্রিল ৭ জেলায় সাতজন এবং ২৪ এপ্রিল ১২ জেলায় ১৫ জন মারা যায়। ৪ এপ্রিল শুরু হয় মৌসুমের প্রথম বজ্রপাত। প্রথম দিনেই মারা যায় তিনজন। এ পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৯ জন চট্টগ্রাম বিভাগে। এরপর ঢাকা বিভাগে ১৮ জন, বরিশালে ১২, ময়মনসিংহে ১১, খুলনায় ৮, সিলেটে ৬, রংপুরে ৫ এবং রাজশাহীতে ৪ জন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের গবেষণায় দেখা গেছে, এপ্রিলে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে কিশোরগঞ্জ, পটুয়াখালী এবং লক্ষ্মীপুরে। তিন জেলায় প্রাণ হারিয়েছে ছয়জন করে। গাইবান্ধা ও ময়মনসিংহে পাঁচজন করে মারা যায়। হাওর এলাকা সুনামগঞ্জ এবং খাগড়াছড়িতে মৃত্যু হয় চারজন করে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবদুল মান্নান জানান, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বজ্রবৃষ্টি বেশি হয়। বজ্রপাতের সময়সীমা ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট। খোলা স্থানে বজ্রপাত হলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে। এ জন্য হাওরাঞ্চলে বজ্রপাত পূর্বাভাস যন্ত্র বসানো যেতে পারে।
উল্লেখ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত এক দশকে (২০১০ থেকে ২০১৯ সাল) দেশে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজার ৮১ জন। ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি ৩৫৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৬ সালে চার দিনে ৮১ জনের প্রাণহানির পর নড়েচড়ে বসে সরকার। সে বছরই বজ্রপাতকে দুর্যোগ ঘোষণা করা হয়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়