লকডাউন ভেঙে ঢাকামুখী মানুষের ঢল থামছে না
নদীপথে ঢাকায় ফেরা মানুষের ঢল থামছে না। করোনার হটস্পট ঢাকায় ফিরতে যেন পাগল প্রায় মানুষ। পরিবার পরিজন নিয়ে দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ও বাসস্থানে এখন মানুষ ফিরছে লকডাউন ভেঙে।
গত ২৬ মার্চ হতে করোনার কারণে লকডাউন থাকায় এ সকল লোকজন শহর ছেড়ে দঙ্গিণবঙ্গের গ্রামের বাড়িতে ছুটে যায় পরিবার পরিজন নিয়ে। সরকার গার্মেন্টেসের পর ঢাকার মার্কেট খুলে দেবার ঘোষণার পর নানা শ্রেণি পেশার মানুষ ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে।
শুক্রবার ভোর হতে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটের ফেরিতে শতশত লোক পার হয়ে আসছে শিমুলিয়া ঘাটে। তাই ১২তম দিনেও থামেনি ঢাকামুখী দক্ষিণবঙ্গের মানুষের ঢল।
সকালে সরেজমিনে শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কাঁঠালবাড়ি ঘাট হতে শত শত লোক আসছে ফেরিতে করে শিমুলিয়া ঘাটে। সামান্য কয়েকটি গাড়ির সাথে শতশত লোক পরিবার পরিজন নিয়ে ঘেষাঘেষি করে ফেরিতে দাঁড়িয়ে পার হচ্ছে প্রমত্তা পদ্মা।
এমনকি ফেরির দ্বিতীয় তলায় ওঠার সিড়িতেও দাঁড়িয়ে লোক আর লোক। শিমুলিয়া ঘাটের পন্টুনে ফেরি ভেড়ার সাথে সাথেই এ সকল লোকজন আবার কার আগে কে নামবে এ প্রতিযোগিতায় এক জনের উপর দিয়ে আরেকজন চলতে শুরু করছে। যেন বাস ছেড়ে যাচ্ছে তাদের রেখে। অথচ বাস স্ট্যান্ডে বাস থাকলেও কোনটিই চলছে না সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে। বাস না পেয়ে এ সকল যাত্রীরা গত কিছু দিনের মত নসিমন, করিমন, অটোরিকশা, সিএনজি, থ্রি হুইলার, টেম্পু, অফলাইনের উবার, পাঠাও ও সহস্রাধিক মোটর সাইকেলে ভেঙে ভেঙে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে ফিরছে। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তেমনি ভাড়াও গুণতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। শুধু শিমুলিয়া থেকে ঢাকাই নয়, এর পূর্বে দক্ষিণবঙ্গের ভোলা, পটুয়াখালীসহ ২১ জেলার লোক এভাবে লোকাল পরিবহনে করে কাঁঠালবড়ি ঘাটে এসে পৌঁছাচ্ছে দুর্ভোগ আর কষ্টের মধ্যে। তারপর ফেরি পার হয়ে শিমুলিয়া ঘাটে।
মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক কবির হোসেন জানান, মনে হচ্ছে লোকজন দীর্ঘদিন এক জায়গায় আটকা থেকে অধৈর্য হয়ে পড়েছে। মরণব্যাধি করোনাকে তারা এখন ভয় পাচ্ছে না। কর্মস্থলে ফিরতে সকলেই এখন উদগ্রীব হয়ে পড়েছে। তাছাড়া লোকজনের হাতে টাকা পয়সা কমে যাওয়ায় তারা এখন হয়তো কাজকর্মে যোগ দিতে চায়। তাই ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন এ নৌরুট দিয়ে শত শত লোক ঢাকাসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে ফিরছে। শুক্রবার সকাল থেকেও ছিল মানুষের ঢল। ফেরিগুলোতে যেন তিল ধারণের জায়গা ছিল না।
মাওয়া ট্রাফিক জোনের টিআই হিলাল উদ্দিন বলেন, “আজও ঈদের উৎসবের মতো মানুষের ঢল ছিল ঢাকামুখী। করোনা বলে কিছু আছে-এমনটি যেনো তাদের মনেই নেই। তাই একে অন্যের সাথে ঘেষাঘেষি করে প্রতিযোগিতায় মত্ত ছিল পরিবহনে উঠতে। ঢাকামুখী লোকজনের এতোই চাপ ছিল যে, আমরা গাড়িগুলোকে পার্কিং ইয়ার্ড ও রাস্তার বাইরে পাশের নৌপুলিশের অফিসের মাঠে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হই। সকাল থেকে ১০টি ফেরি চলাচল করছে। প্রতিটি ফেরিতে ছিল লোক আর লোক।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ