গুজব: ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে যা বলা হয়েছে
রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ মে) র্যাব-৩ সিপিসি-১ এর ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন: কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর, ব্যবসায়ী মোস্তাক আহম্মেদ, ‘রাষ্ট্রচিন্তা’র সংগঠক দিদারুল ইসলাম, মিনহাজ মান্নান ইমন, প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল, শায়ের জুলকারনাইন, আশিক ইমরান, ফিলিপ সমাচার, স্বপন ওয়াহিদ, শাহেদ আলম, ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন। এছাড়া আরও অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এস এম শামীম জানান, রমনা থানায় দায়ের করা এই মামলায় ইতোমধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩। তারা হলেন আহমেদ কবীর কিশোর, মোস্তাক আহম্মেদ, দিদারুল ইসলাম, মিনহাজ মান্নান ইমন। আহমেদ কিশোর ও মোস্তাক আহম্মেদ কারাগারে রয়েছেন। বাকি দুজন রমনা থানা পুলিশের হেফাজতে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি কিছু সংখ্যক লোক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গুজব ও সরকারবিরোধী পোস্ট, মহামারি করোনাভাইরাস সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। ওই খবরের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট, আইডি পর্যবেক্ষণ তথা সাইবার টহল করি। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ‘আই এম বাংলাদেশি’ নামে ফেসবুক পেজে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশে অপপ্রচার বা গুজবসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দেওয়া আছে। যা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়। ‘আই এম বাংলাদেশি’ ফেসবুক পেজ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই পেজের অ্যাডমিন শায়ের জুলকারনাইন এবং আমি কিশোর, আশিক ইমরান, ফিলিপ সমাচার, স্বপন ওয়াহিদ, মোস্তাক আহম্মেদ নামীয় ফেসবুক আইডিসহ পাঁচজন এডিটর পরস্পর যোগসাজসে ফেসবুক পেজটি দীর্ঘদিন পরিচালনা করছে।”
আহমেদ কবীর কিশোর, তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন, শাহেদ আলম ও আসিফ মহিউদ্দিনের মধ্যে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিং’ এর প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়েছে, “তার ব্যবহৃত স্যামসাং মোবাইল ফোনে ‘আমি কিশোর’ ফেসবুক একাউন্ট লগইন অবস্থায় পাওয়া যায়। আলামত পর্যালোচনা করে রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, মহামারি করোনাভাইরাস, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার প্রমাণ পাওয়া যায়।”
পাঁচটি ইউআরএল লিংক দিয়ে এজাহারে বলা হয়েছে, ‘বর্ণিত ইউআরএল লিংকে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে তাসনিম খলিল, শায়ের জুলকারনাইন, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিং এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।’ আহমেদ কবীর কিশোরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এজহারে বলা হয়েছে, “সে একজন কার্টুনিস্ট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার অসংখ্য ফলোয়ার রয়েছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়, ঘটনা, মহামারি কারোনাভাইরাস, জাতির জনক, সরকার প্রধান, সরকার দলীয় বিভিন্ন নেতাদের কার্টুনের ব্যঙ্গচিত্র দিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার ব্যাপারে তাসনিম খলিল তাকে ইন্ধন দিয়েছে। এছাড়াও তাসনিম খলিলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ‘আই এম বাংলাদেশি’ ফেসবুক পেজটিতে ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহার করে ওই পেজটির এডমিন শায়ের জুলকারনাইন এবং আশিক ইমরান, ফিলিপ সমাচার, স্বপন ওয়াহিদ, মোস্তাক আহম্মেদ ও তার আমি কিশোর নামীয় ফেসবুক আইডিসহ ৫ জন এডিটর পরস্পর যোগসাজসে মহামারি করোনাভাইরাস, জাতির জনক, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ন করতে বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশে অপপ্রচার করেছে বলে স্বীকার করে।”
প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল সম্পর্কে এজাহারে বলা হয়েছে, ‘তাসনিম খলিল ফেসবুক আইডিতে জাতির জনক, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ও বাহিনী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুন্ন করার বা বিভ্রান্তি ছড়াতে অপপ্রচার বা গুজবসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্ট বর্ণিত ইউআরএল লিংকে পাওয়া যায়।’
আসামি মোস্তাক আহম্মেদের ব্যাপারে এজাহারে বলা হয়েছে, “তিনি ‘আই এম বাংলাদেশি’ পেজের এডিটর। অন্য আসামিদের যোগাসাজসে তিনিও গুজব ছড়িয়েছেন।” মোস্তাক আহম্মেদ গুজব ছড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে এজাহারে দাবি করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী মোস্তাক আহম্মেদের বিরুদ্ধে এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ‘এছাড়াও হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে শায়ের জুলকারনাইনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিং এর প্রমাণ পাওয়া যায়।’ ‘মাইকেল কুমির ঠাকুর’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকেও মোস্তাক আহম্মেদ গুজব ছড়িয়েছেন বলে এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএস