যশোরের রেল বাজারে দোকানদারের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়
যশোরের রেল বাজারে ইজারার নামে দোকানদারের কাছ থেকে জোর করে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
মঙ্গলবার সকালে চার থেকে পাঁচজন লোক এসে ইজারার টাকা আদায়ের নামে স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকানের কাছে অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন। দোকানিরা অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দোকানিদের তোপের মুখে পড়ে তারা সেখান থেকে চলে যান।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে যশোরের রেল বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এমনকি এসব লোকজন ব্যক্তিমালিকানাধীন দোকান ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকেও অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন।
উল্লেখ্য, যশোর রেল বাজারটি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। যশোর পৌরসভা এটাকে প্রতিবছর ইজারা দিয়ে থাকেন। বাংলা ১৪২৬ সালে যশোর পৌরসভা ৪৪ লাখ টাকার বিনিময় হাজি সুমনের নামে ইজারা হয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বাজারের স্থায়ী পাকা দোকানিদের কাছ থেকে ইজারা বাবদ ১২ টাকা ও রাস্তার আশেপাশে অস্থায়ী দোকানদারদের কাছ থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা হারে নেয়ার বিধান থাকলেও ইজরাদাররা তা মানছে না। বরং প্রতি স্থায়ী দোকান থেকে প্রতিদিন ৩০ টাকা হারে অস্থায়ী দোকানদারদের কাছ থেকে ৫০ টাকা হারে দীর্ঘদিন ধরে আদায় করে আসছেন। মঙ্গলবার পয়লা বৈশাখের প্রথম দিন হওয়ায় বাজার ইজারাদারের লোকজন প্রতি দোকানে গিয়ে ২০ টাকা হারে বেশি দাবি করেন। অর্থাৎ ৬০ টাকা হারে টাকা দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে দোকানদার ও ইজারাদার লোকজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এছাড়া মালিকানা দোকান থেকেও ইজরাদারের লোকজন বেশি টাকা দাবি করেন। টাকা না দেয়ায় মার্কেট মালিক ও দোকানদারদের সাথে শুরু হয় হাতাহাতি। একপর্যায়ে মার্কেট মালিক মুজিব বাহিনীর প্রধান মনির উদ্দিন চড়াও হলে তারা সেখান থেকে চলে যান। টাকা তুলতে আসা এক যুবকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ বছর বেশি টাকা দিয়ে বাজার ইজারা নেয়া হয়েছে। যে কারণে দোকানদারদের ১০ থেকে ২০ টাকা হারে বাড়ানো হয়েছে।
মুজিব বাহিনীর প্রধান আলী হোসেন মনিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের মধ্যেও তারা দোকানিদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করছে। আগে তারা স্থায়ী দোকানদারদের কাছে ৩০ টাকা অস্থায়ী দোকান তাদের কাছ থেকে ৫০ টাকা আদায় করত। আজ (মঙ্গলবার) থেকে তারা প্রতি দোকান থেকে ২০ টাকা বেশি আদায় করছে। এমনকি আমার নিজস্ব দোকাননের ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করছে। তিনি আরো বলেন আমি একেকটি দোকান ভাড়া দিয়েছি ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা প্রতিমাসে। তার উপরে যদি ইজারাদারদের টাকা দিতে হয় তাহলে তারা কিভাবে দোকান চালাবে। এমনিতেই দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে লোকজন বাজারে আসছে না। তার উপরে এ অতিরিক্ত টাকা দোকানদাররা কিভাবে জোগাড় করবে। ফুটপাতে সবজি বিক্রি করতে বসা সবেদ আলি বলেন, “১ ঘণ্টা আগে বাজারে এসেছি কিন্তু কোনো বাজারে কাস্টমার নেই। এক ঘণ্টার মধ্যে ৩০ টাকার সবজি বিক্রি করেছি। আমি যে বাসার সামনে সবজি নিয়ে বসি ওই বাসার মালিক কে দিতে হয় প্রতিদিন ১০ টাকা করে। আর বাজার ইজারাদারদের প্রতিদিন ২৫ টাকা করে দিতে হতো। কিন্তু আজ সকালে ইজারাদারের লোকজন এসে ৩৫ টাকা দাবি করেন। আমার কাছে টাকা না থাকায় তাদেরকে টাকাটা পরে নিতে বলে। কিন্তু তারা কোনো কথাই শুনলো না। সামনের দোকানদারের কাছ থেকে ১০ টাকা ঋণ করে নিয়ে তাদেরকে ৩৫ টাকা দিলে তারা চলে যায়। এই বৃদ্ধ আক্ষেপ করে বলে, কি আর করব বাবা' সব বিচার আল্লাহর কাছে। এ পৃথিবীতে গরিব মানুষ মানুষের জাত না বলে তিনি আক্ষেপ করেন।
বাজারের পূর্বের ইজারাদার মেহেবুব রহমান ম্যানসেল বলেন, “নতুন বছরে এখনো বাজারটি ইজারা হয়নি। আগের বছর ৪৪ লাখ টাকার বিনিময় হাজী সুমন বাজারটি ইজারা পায়। এ বছরে রাসেল নামে একজন বাজারটি ইজারা পায়। কিন্তু তার ব্যাংকে যথেষ্ট টাকা না থাকায় ইজারা বাতিল হয়ে যায়। এরপর এ মাসের ৭ তারিখে নতুন করে ইজারার ঘোষণা হয়। তবে দেশজুড়ে প্রাণঘাতী ভাইরাসের কারণে সেটাও স্থগিত রয়েছে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এক পর্যায়ে আজ সকালে দোকানদারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। বিষয়টি আমাকে জানালে আমি সেখানে লোকজন পাঠায়। এরপর তারা সেখান থেকে চলে যায়। তিনি আরো বলেন, এই মহামারীর মধ্যেও মানুষের ভিতরে কোনো মহানুভবতা নেই। যে কারণে ফুটপাতে বসা দোকানির কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। তারা মনে হয় মরবে না। এসব টাকা-পয়সা কবরে নিয়ে যাবে। তাই তাদের টাকার এত চাহিদা।”
বিষয়টি নিয়ে যশোর পৌরসভার টেন্ডার বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হান্নানের মুঠোফোনে বারবার সংযোগ দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ