ঝিনাইদহে বেড়েই চলেছে তামাক চাষ
ঝিনাইদহ: মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ও পরিবেশ বিনষ্টকারী ফসল তামাক বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ঝিনাইদহে। লাভ বেশি হওয়ায় এ অঞ্চলে বেড়েই চলেছে তামাক চাষ। বড়দের পাশাপাশি বাড়ির ছোট শিশুরাও তামাক চাষের কাজে জড়িয়ে পড়ছে। তামাক কোম্পানীর বিরুদ্ধে তামাক চাষে উৎসাহিত করার অভিযোগ রয়েছে চাষীদের।
এবার জেলার ৬ উপজেলাতে তামাক চাষ হয়েছে ৯ শ’২৫ হেক্টর জমিতে। উদয়পুর, গাড়াগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠগুলোর যেদিকে তাকানো যায় শুধু তামাক আর তামাক। এলাকাগুলোর প্রায় প্রতিটি পরিবারই তামাক চাষের সাথে জড়িত।
প্রতি ১ বেল (৭০ কেজি) তামাক প্রকার ভেদে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। প্রতি বিঘা জমিতে তামাক চাষে খরচ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। আয় হয় ১ লক্ষাধিক টাকা।
বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও ক্ষেত পরিচর্যা থেকে শুরু করে সংগ্রহ করছে তামাক পাতা। সেই পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণেও তারা কাজ করছে। ফলে বড়দের পাশাপাশি শিশুদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
তামাক চাষ বন্ধে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। বরং তামাক চাষে ঋণ দেওয়া, উৎসাহ প্রদান করাসহ তামাক কোম্পানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
ঝিনাইদহের উদয়পুর গ্রামের তামাক চাষী হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাদেশকে জানান, তামাক চাষে খরচ অনেক কম হয়, আর ফলন ভালো হলে অনেক লাভ হয়। লাভ বেশি হওয়ায় আমরা তামাক চাষ করি। তামাক কোম্পানীগুলো আমাদের বিভিন্ন সময় নানাভাবে উৎসাহ দেয়।
তিনি আরো জানান, আমরা জানি তামাক শিশুসহ সকলের জন্য ক্ষতিকারক। তারপরও আমরা গরিব মানুষ বলে খরচ বাঁচানোর জন্য শিশুদের দিয়ে এই কাজ করাই।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম জানান, তামাক চাষ মানবদেহে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। দীর্ঘদিন ধরে কেউ তামাক চাষের সাথে জড়িত থাকলে তার হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক ও ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিসসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই মানবস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ এই তামাক চাষ বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহ্ মো. আকরামুল হক জানান, তামাক চাষ হঠাৎ করেই বন্ধ করা যাবে না। কারণ সরকারের অনেক পলিসির ব্যাপার আছে, অনেক বিষয় এর সাথে জড়িত। কিন্তু তামাক চাষ বন্ধে চাষীদের আমরা উৎসাহিত করে চলেছি।
ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খলিল আহমেদ নিউজবাংলাদেশকে জানান, তামাক কোম্পানীগুলো নিয়ন্ত্রণে আমাদের তেমন কোনো আইন নেই। তবে তামাক চাষে যাতে চাষীরা নিরুৎসাহিত হয় সে জন্য তামাকের ক্ষতিকারক বিষয়ের উপর নিয়মিত প্রচারনা চালানো হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, শিশুদের দিয়ে তামাকের কাজ করানো শ্রম আইনের লঙ্ঘন হলেও ঝিনাইদহে যে শিশুরা তামাকের কাজ করে তারা অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তারা ফুল টাইম স্টুডেন্ট না, দিনের অর্ধেক সময় মাঠে ও বাড়িতে কাজ করে আর বাকি সময় স্কুলসহ অন্যান্য কাজ করে। দরিদ্র পরিবারের শিশুগুলো যাতে এই ক্ষতিকারক কাজে লিপ্ত না হয় এ জন্য তাদের পরিবারগুলোকে ক্ষুদ্র ঋণ, নানা আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্নভাবে সচেতন করে তোলা হচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এসআরআর/এফই
নিউজবাংলাদেশ.কম