আইএমএফ বলছে জিডিপি হবে ৬ শতাংশ
ঢাকা: চলতি ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে সামষ্টিক অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি ৬ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে কোন ধরনের অনিশ্চয়তা না থাকেল ১৫-১৬ এর আকার হবে সাড়ে ৬ শতাংশ।
নির্ধারিত জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আগেই শংকা প্রকাশ করেছিল আইএমএফ। ঢাকা সফররত আইএমএফ মিশনের প্রধান রডরিগো কুবেরো মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক এ তথ্য দিলেন।
কুবেরো বলেন, “চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতির যে চিত্র লক্ষ্য করা যায় এতে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ থেকে ৬ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। তবে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে অর্থনীতির উপর এর বেশি প্রভাব পড়বে।”
চলমান সমস্যাকে রাজনৈতিক অস্থিরতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের পরিবহন ও সেবাসহ বিভিন্ন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ ও উন্নয়ন প্রবৃদ্ধির জন্যও এটি বিরাট বাধা হতে পারে।”
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. এম আসলাম আলম উপস্থিত ছিলেন।
চলমান পরিস্থিতে জিডিপির লক্ষমাত্রা অর্জনের ব্যর্থতাকে দায়ি করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। তবে টানা অবরোধ-হরতালে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি শক্তিশালী রয়েছে বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চলমান সংসদ অধিবেশনে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুলাই-ডিসেম্বর) বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে তিনি এ দাবি করেন।
অন্যদিকে ২০ দলের এ কর্মসূচিতে ব্যবসায়ীদের ২ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ। এর আগে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতায় অর্থনীতির ক্ষতির পরিমান তুলে ধরেন।
অভ্যন্তরীন সমস্যা কারণে জিডিপির বাস্তবায়ন নিয়ে এর আগে শংকা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ (পিপিআই)।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে চলমান পরিস্থিতে বাংলাদেশের জিডিপি ৬ শতাংশ অর্জন করাও কঠিন হবে। অন্যদিকে এডিবি মনে করছে জিডিপি হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে জিডিপির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬ দশমিক ৬ থেকে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। আর বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ (পিপিআই) বলেছে জিডিপি হবে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
ব্যতিক্রম মনে করছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)। তাদের মতে চলমান অস্থিরতায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সরকারের পক্ষে কোনভাবে সম্ভব নয়। অন্যান্য বছরের মত ৬ শতাংশের কাছাকাছি থাকতে পারে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যবস্থা।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “আমরা এ নিয়ে আগেই বলেছি, যে লক্ষ্যমাত্রা তা অর্জন করা সম্ভব নয়। সব কিছু মিলিয়ে অন্যন্য বছরের ধারা বাহিকতা ৬ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে। গত ২ মাসের অস্থিরতায় যে ক্ষতি হয়েছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনভাবে সম্ভব নয়। তার পরেও যে ক্ষতি হয়েছে তা থেকে কিছুটা বেরিয়ে আসার চেষ্টা হচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে এটা সম্ভব হবে না। আমি মনে করি, যে পরিস্থিতি চলছে তাতে দেশের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
এদিকে অবরোধ ও হরতালের ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্চ অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি একদিনের হরতাল অবরোধে অভ্যন্তরীন অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে দশমিক ১৭ শতাংশ। টানা দুই মাসের অবরোধে ক্ষতির পরিমান দাঁড়িয়েছে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কম হয়েছ ১০ দশমিক ২ শতাংশ।
নিউজবাংলাদেশ.কম/জেএস
নিউজবাংলাদেশ.কম